দশম জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশন আজ শুরু হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গত ২১ মার্চ এ অধিবেশন আহ্বান করেছেন।
আজ রোববার (৮ এপ্রিল) বিকাল ৫টায় শুরু হতে যাওয়া বাজেট পূর্ববর্তী এই অধিবেশন খুবই সংক্ষিপ্ত হবে।
বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ বছর ২০১৮ সাল। শেষ বছরের বাজেটের আগে এই অধিবেশনেই আসছে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী বিল। এ বিলে সংরক্ষিত আসনে নারীদের নির্বাচনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও থাকছে সংরক্ষিত আসন।
সংবিধান অনুযায়ী, ৩৫০ জন সংসদ সদস্য (এমপি) নিয়ে সংসদ গঠিত হয়। দুই ধরনের নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে সদস্যরা নির্বাচিত হন।
এর মধ্যে একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০০ জন এবং সংসদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতিতে ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বর্তমানে থাকা ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সদস্যের মেয়াদ চলতি সংসদেই শেষ হচ্ছে।
ওই অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, ‘সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধন) আইন, ২০০৪ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে শুরু করিয়া ১০ বত্সর কাল অতিবাহিত হইবার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভাঙ্গিয়া না যাওয়া পর্যন্ত (৫০টি আসন) কেবল মহিলা-সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে এবং তাঁহারা আইনানুযায়ী পূর্বোক্ত সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইবেন। তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার কোন কিছুই এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন কোন আসনে কোন মহিলার নির্বাচন নিবৃত্ত করিবে না।’
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে সংরক্ষিত নারী সদস্যের ৪৫টি আসন সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়।
তখন এর মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছিল পরবর্তী সংসদের (নবম সংসদ) প্রথম বৈঠক থেকে ১০ বছর।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। আর প্রথম অধিবেশন বসে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। সেই হিসাবে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের মেয়াদ রয়েছে।
২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নারী সদস্যদের সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০ এ উত্তীর্ণ করা হয়। কিন্তু এর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। ফলে এখনই সংশোধনী না আনলে আগামী একাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হবে।
এই ঝামেলা এড়াতেই সপ্তদশ সংশোধনী আনা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) আইনের খসড়ায় সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে।
রোববার (৮ এপ্রিল) চলতি বছরের দ্বিতীয় ও দশম সংসদের ২০তম অধিবেশন বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হবে। এর আগে বিকেল ৪টায় স্পিকারের সভাপতিত্বে কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশনের সময় সূচি নির্ধারণ হবে।
এবারের অধিবেশন খুবই সংক্ষিপ্ত হবে বলে গণমাধ্যমকে জানান সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ।
তিনি বলেন, এরপর যেহেতু বাজেট অধিবেশন তাই সাংবিধানিক বাধ্যবাধতায় অধিবেশনটি বসছে। আগামী ১৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির দ্বিতীয় মেয়াদের শপথ অনুষ্ঠান। এরপর ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে যাওয়ার কথা রয়েছে। কাজেই ধারণা করা হচ্ছে রোববার শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার ১২ এপ্রিল শেষ হবে এ অধিবেশন।
এর আগে গত ২১ মার্চ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অধিবেশনের আহ্বান করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এই অধিবেশনে পুরানো ১৩টি ও নতুন ৩টি বিল উত্থাপন এবং পাস হওয়ার কথা।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯তম অধিবেশন শেষ হয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় এক অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০ কার্য দিবসের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসার নিয়ম রয়েছে।