জাল ওকালতনামা ও স্ট্যাম্পের মাধ্যমে অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে খুলনার যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীর বিরুদ্ধে। জালিয়াতির ঘটনায় চারজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে তিন আইনজীবীর সদস্যপদও। দেওয়া হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশ।
তবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই খুলনা জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক আইনজীবী সেলিনা আক্তার পিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, দলের একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এই অপবাদ ছড়াচ্ছে। অবশ্য মামলার আসামিদের মধ্যে পিয়ার নাম নেই।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, জাল ওকালতনামা ও স্ট্যাম্পের বিষয়টি ধরা পড়ায় গত ১ এপ্রিল খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান নান্নু চারজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। আসামিরা হলেন আইনজীবী এস এম আরিফুর রহমান, আইনজীবী জি এম শাহাদাৎ হোসেন, আইনজীবী রোজালিন সরকার ও আইনজীবী বিউটি আক্তার।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আইনজীবী এস এম আরিফুর রহমান, আইনজীবী জি এম শাহাদাৎ হোসেন ও আইনজীবী রোজালিন সরকারকে গ্রেপ্তার করে। পলাতক রয়েছেন বিউটি আক্তার।
এ অবস্থার মধ্যেই ফের গত বৃহস্পতিবার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. আবুল বাশার মিয়ার আদালতে জাল ওকালতনামা ও স্ট্যাম্প দাখিল করা হয়। তিনি বিষয়টি ধরে এর সঙ্গে জড়িতদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে জেলা আইনজীবী সমিতিকে নির্দেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার বিচারক এক আদেশনামায় (স্মারক নম্বর ১১৮) এ ব্যাপারে উল্লেখ করেন, ‘মামলার ফরিয়াদিপক্ষের নিয়োজিত কৌঁসুলি সেলিনা আক্তার পিয়া, এস এম আরিফুর রহমান ও রোজালিন সরকার কর্তৃক সম্পাদিত ৩৫৬৯১ ক্রমিক উল্লেখিত ওকালতনামার ও উহার সহিত বেনেভোলেন্ট ফান্ডের জন্য ১০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, উহার সাথে অপারপর মামলায় দাখিলকৃত ওকালাতনামার সাথে সংযুক্ত একই স্ট্যাম্পের যথেষ্ট গরমিল রহিয়াছে। বিষয়টি আদালতে উপস্থিত অন্য আইনজীবীদের গোচরে আনা হলে তারা আদালতকে জানান যে, এই মামলায় ফরিয়াদিপক্ষের সম্পাদিত ওকালতনামা ও উহার সহিত বেনেভোলেন্ট ফান্ডের জন্য ১০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প সম্পূর্ণ জাল।’
বিচারক আদেশে আরো বলেন, ‘এহেন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত থাকার কারণে ফরিয়াদিপক্ষের কৌঁসুলি তিনজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবার জন্য খুলনা আইনজীবী সমিতির উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে আদেশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশ দেবার নির্দেশ দেয়া হলো।’
যুব মহিলা লীগের নেত্রী পিয়ার জুনিয়র হচ্ছেন এস এম আরিফুর রহমান। অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলেন সেলিনা আক্তার পিয়া জানান, তিনি তাঁর চেম্বারের জুনিয়র আইনজীবীর মাধ্যমে ওকালতনামা ও বন্ড সংগ্রহ করেছিলেন।
আইনজীবী সেলিনা আক্তার পিয়া নিজে জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নন বলেনও দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘দলের একটি গোষ্ঠী আমার নামে অপবাদ ছড়াচ্ছে।’ তবে এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় নাম এলে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ওকালতনামা ও স্ট্যাম্প জালিয়াতির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) টিপু সুলতান জানান, এ মামলায় তিন আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’
তদন্ত কর্মকর্তা আরো দাবি করেন, ‘আসামিরা স্বীকার করেছেন, তাঁরা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য ওকালতনামা ও স্ট্যাম্প ছাপিয়ে আইনজীবীদের কাছে কম দামে বিক্রি করতেন।’
খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান নান্নু জানান, ওকালতনামা ও স্ট্যাম্প জালিয়াতির অভিযোগে তিন আইনজীবী এস এম আরিফুর রহমান, জি এম শাহাদাৎ হোসেন ও বিউটি আক্তারের সদস্যপদ সাময়িক বাতিল করা হয়েছে।
এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবারের আদালতের আদেশ অনুযায়ী, আইনজীবী সেলিনা আক্তার পিয়াকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার সমিতির বৈঠকে বিষয়টি তোলা হবে। সূত্র: এনটিভি অনলাইন