ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসির বাসভবনে হামলা পরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) সকালে ঢাবি ভিসির বাসভবন পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। এসময় তিনি ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে কোনো অবস্থায় ছাড় না দেওয়ার কথাও বলেন।
হামলার ঘটনাকে মধ্যযুগীয় আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এটি একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানায়। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালো রাতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম হামলা হয়েছিলো। কিন্তু ভিসির বাসভবন কখনও আক্রান্ত হয়নি। এমনকি স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও এরকম ঘটনা ঘটেনি। বেডরুমসহ সবকিছু তছনছ করা হয়েছে। বাথরুমের কমোড, আসবাবপত্র ও ভিসির পরিবারের স্বর্ণালঙ্কার পর্যন্ত লুট করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এটি যে পরিকল্পিত হামলা তা প্রমাণিত। কারণ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বিকল করে দেওয়া হয়েছে। এই নারকীয় বর্বরতার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্ত চলছে। কিছুটা চিহ্নিত হয়েছে। বাকিটাও চিহ্নিত হবে। এর বিচার করতেই হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে।
ঘটনার দিন ভোর ৪টা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী জেগে ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোটার সঙ্গে ভিসির কি সম্পর্ক? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর কি এ কোটা চালু করেছেন? নাকি তিনি চলমান কোটায় সমর্থন করেছেন। আন্দোলনের সঙ্গে এটি (ভিসির বাসভবনে হামলা) কেন জড়িত করা হলো এর জবাব দিতে হবে।
আন্দোলনকারীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল ভূমিকা নিয়েছিলো, বেশিরভাগ অলরেডি বসেছে, সমঝোতা হয়েছে। আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকবে। বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
তিনি আরো বলেন, যারা সত্যিকার কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে চায় এই সমঝোতার পর তারা আন্দোলনে থাকবে না। যারা থাকবে এ আন্দোলনের সঙ্গে তাদের মধ্যে বিদ্বেষ প্রসূত রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। আর সে রাজনীতির অন্ধ আক্রোশের শিকার হয়েছে ঢাবি ভিসির বাসভবন। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এরা কি কোটা সংস্কার চায় নাকি দেশের রাজনীতি অশান্ত করতে চায়। ক্যাম্পাসকে অশান্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। এটি খতিয়ে দেখতে হবে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে রোববার বিকেলে গণপদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করে ঢাবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা অবরোধ করে শাহবাগ মোড়। রাস্তা থেকে তাদের হটিয়ে দিতে রাতে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী আহত হন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে রোববার (০৮ এপ্রিল) বিকেলে গণপদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করে ঢাবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা অবরোধ করে শাহবাগ মোড়। রাস্তা থেকে তাদের হটিয়ে দিতে রাতে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী আহত হন।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে মধ্যরাতেই রাস্তায় নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ছাত্রীরা। এতে উত্তাল হয়ে পড়ে গোটা ক্যাম্পাস। এসময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক শাহবাগে এসে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু এরমধ্যেই ঢাবি ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনে ওই হামলা চালানো হয়। সেসময় দু’টি মাইক্রোবাস ও মসজিদের সামনে মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগও করা হয়।
এ বিষয়ে সোমবার (০৯ এপ্রিল) সকালে উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, গতকাল (রোববার) রাতে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না। এরা প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী একটি গোষ্ঠী, লাশের রাজনীতির জন্য তারা এই তাণ্ডব চালিয়েছে।
উপাচার্যের ভাষ্যে, বিডিআর বিদ্রোহের হামলাকারীদের মতোই মুখোশ পরে তারা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। তাদের হামলার ধরন দেখেই বোঝা গেছে, তারা কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, এরা প্রশিক্ষিত একটি দল।