কোটাপ্রথা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের নেতারা এই ঘোষণা দেন।
নেতারা জানান, আন্দোলন প্রত্যাহার বা বাতিল নয়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কোটা ব্যবস্থা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করছেন তারা। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার ও আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় আট শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। তার বক্তব্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে চলমান আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
বুধবার রাতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা সবাই এ সিদ্ধান্ত নেন জানিয়ে হাসান আল মামুন বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগপর্যন্ত আমরা আন্দোলন স্থগিত রাখব।
তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপন জারি করার পর যদি বুঝি আমাদের ন্যায্য দাবি প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ হয়নি, তখন আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে একটি চিঠি দেব। যারা কোটার প্রাপ্য দাবিদার, তারা কোটা পাক, এটি আমরাও চাই। যেমন মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং প্রতিবন্ধী কোটার দাবিদারদের কোটা দিতে ওই চিঠিতে আহ্বান জানাব। তবে সেটি যেন প্রাপ্য পরিমাণযোগ্য হয়।
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. উজ্জ্বল মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রেখে আমরা আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শুধু একটিই অনুরোধ করব- কোনো মামলা দিয়ে আমাদের সাধারণ আন্দোলনকারীদের যেন হয়রানি করা না হয়।
কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন।
সর্বশেষ গত রোববার দাবি আদায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন।
আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ।
পরে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থান নিলে রাত ১০টায় সেখানেও অভিযান চালায় পুলিশ। একই সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়। এ নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
আন্দোলন চলাকালেই মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর চালায় অজ্ঞাত মুখোশধারীরা।