২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল এখনো প্রকাশিত না হওয়ায় শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। যার কারণে হতাশা কাজ করছে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া দেশের ১১ হাজার ৮শ ৪৬জন শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মধ্যে। এমনকি বর্তমান কমিটি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করবে কি না বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
ফলাফল ঘোষণার কোনো নির্দিষ্ট তারিখের কথা জানা না গেলেও ১৪ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বার কাউন্সিলের নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইতোমধ্যে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্রও দাখিল করেছেন।
শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের প্রশ্ন, ‘নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু তাদের ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে না। কিন্তু কেন?’ এ প্রশ্নের জবাব জানতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় বার কাউন্সিলের একাধিক নেতার।
জানা যায়, ২০১৫ সালে আইনজীবী তালিকাভুক্তির পর এখন পর্যন্ত নতুন করে কোনো আইনজীবী সনদ পাননি। অথচ প্রতিবছর পরীক্ষা নিয়ে আইনজীবী তালিকা ভুক্তির কথা উল্লেখ রয়েছে বার কাউন্সিল অ্যাক্টে। ২০১৫ সালে এমসিকিউ [মাল্টিপল চয়েস অব কোয়েশ্চেনস] পরীক্ষার অনেকদিন পর আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে প্রায় ছয় মাস আগে। এখনো সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়নি। এতে হতাশায় ভুগছেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বার কাউন্সিলে শিক্ষানবিশ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বিগত সময়েরে চেয়ে এবার বেশি। পরীক্ষার খাতা যারা দেখেন তাদের সংখ্যাও কম। মূলত এ পরীক্ষার খাতাগুলো দেখেন হাইকোর্টের বিচারপতিরা। এ ছাড়া এনরোলম্যান্ট (আইনজীবী তালিকাভুক্তির জন্য কমিটি) সভাপতি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি প্রধান বিচারপতি হওয়ায় এনরোলমেন্ট কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়নি।’
কাউন্সিলের আরেকজন নেতা সৈয়দ রেজাউর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমকে কয়েকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
হতাশার কথা উল্লেখ করে ঢাকা বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী হাসিনা দীপা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় ৬ মাস আগে। এখনো রেজাল্ট দিচ্ছে না বার কাউন্সিল। অথচ তারা নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছেন।’
জীবন থেকে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে হতাশার মধ্যে ফেলে রেখেছে বার কাউন্সিল। আমাদের রেজাল্ট ঘোষণা না করায়, আমরা যেমন হতাশ তেমনি পরের ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও হতাশ। কারণ আমাদের রেজাল্ট ঘোষণা করা হচ্ছে না, নতুন ব্যাচের জন্য পরীক্ষার সিডিউলও ঘোষণা করা হচ্ছে না। আমাদের জীবন থেকে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে।’
আরেকজন ফলপ্রার্থী মোসাদ্দেক আহমদ বশির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রেজাল্ট ঘোষণা না করায় আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছি। লাইফের অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। আমাদের রেজাল্ট ঘোষণা করে বার কাউন্সিলের নির্বাচনী সিডিউল ঘোষণা করা উচিত ছিল।’
ফলাফলের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষানবিশ আইনজীবী মো. খাদেমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এতদিন পরেও আমাদের রেজাল্ট ঘোষণা করা হচ্ছে না। এজন্য আমরা মানসিকভাবে চিন্তিত। হতাশার মধ্যে রয়েছি। আজকেও বার কাউন্সিলে খবর নিলাম রেজাল্ট ঘোষণার বিষয়ে তারা বললেন, এ মাসের শেষের দিকে রেজাল্ট হতে পারে। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও এখানো রেজাল্ট হচ্ছে না। এটি আমাদের সবার জন্যেই দুঃখজনক।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, ‘আইন পড়া শেষ করেছি ২০১৩ সালে, এখন ২০১৮। সর্বশেষ ২০১৫ সালে আইনজীবী তালিকাভুক্ত করা হয়। এ বছর লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে প্রায় ছয় মাস আগে। কিন্তু এখনো ফল প্রকাশ হয়নি। রেজাল্ট না হওয়ায় হতাশা কাজ করছে। পরীক্ষায় পাস না করলে আবারও প্রস্তুতি নিতে হবে। সেটাও হচ্ছে না।’ সূত্র: প্রিয়.কম