বার কাউন্সিলের নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে নেমেছে বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভরাডুবির পর বার কাউন্সিলে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা।
অপরদিকে বার কাউন্সিলে নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী প্যানেল। এ নিয়ে সারা দেশে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আইনজীবীরা।
আগামী ১৪ মে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনসহ দেশের জেলা সদর ও উপজেলা সদরের দেওয়ানি আদালত প্রাঙ্গণ ও বাজিতপুর কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সচিব আনিসুর রহমান জানান, নির্বাচন সংক্রান্ত আপত্তি শুনানির জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হলেন, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম। বাকি দুজন সদস্য হলেন, বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও অ্যাডভোকেট মো. ওজিউল্ল্যাহ।
প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বার কাউন্সিল ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। আর অন্য ১৪ জন আইনজীবীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ১৪ জনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সারা দেশে সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে সাতজন এবং দেশের সাতটি অঞ্চলের লোকাল আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে সাতজন নির্বাচিত হবেন। ৪৩ হাজার ৭১৩ জন আইনজীবী তিন বছরের জন্য এই নির্বাচনে তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সূত্রে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে মোট ৬২ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল)। ভোটগ্রহণ ১৪ মে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তাঁদের নিজ নিজ প্যানেল চূড়ান্ত করতে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সাথে একাধিক বৈঠকে বসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আওয়ামী লীগের ১০ সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে তাঁদের প্যানেল চূড়ান্ত করেন। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও বিএনপির সিনিয়র নেতারা তাঁদের প্যানেল চূড়ান্ত করেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্যানেলভুক্ত নেতারা হলেন, বার কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সৈয়দ রেজাউর রহমান, জেড আই খান পান্না, পরিমল চন্দ্র গুহ, শ. ম রেজাউল করীম এবং মোখলেছুর রহমান বাদল। এই সাতজন সাধারণ সদস্য পদে লড়বেন।
অন্যদিকে সাতটি আঞ্চলিক সদস্য পদে আছেন, এ গ্রুপ থেকে কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, বি গ্রুপ থেকে মো. কবির উদ্দিন ভূঁইয়া, সি গ্রুপ থেকে ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, ডি গ্রুপ থেকে এ এফ মো. রুহুল আনাম চৌধুরী, ই গ্রুপ থেকে পারভেজ আলম খান, এফ গ্রুপ থেকে মো. ইয়াহিয়া ও জি গ্রুপ থেকে মো. রেজাউল করিম।
এদিকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবী প্যানেলের সাধারণ সদস্য প্রার্থীরা হলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ফজলুর রহমান, তৈমূর আলম খন্দকার, বোরহানউদ্দিন, হেলালউদ্দিন মোল্লা, মো. আব্বাস উদ্দিন ও আসিফা আশরাফী পাপিয়া।
আর অঞ্চলভিত্তিক সদস্য পদে এ গ্রুপ থেকে মো. মহসীন মিয়া, বি গ্রুপ থেকে বাঁধন কুমার গোস্বামী, সি গ্রুপ থেকে শেখ মোখলেসুর রহমান, ডি গ্রুপ থেকে মো. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, ই গ্রুপ থেকে এস আর ফারুক ও এফ গ্রুপ থেকে মো. ইসহাককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
সাতটি অঞ্চল হলো, সাবেক বৃহত্তর ঢাকা জেলার সকল আইনজীবী সমিতি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, ফরিদপুর জেলার আইনজীবী সমিতি, বৃহত্তর চট্রগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার আইনজীবী সমিতি, বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি, বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি, বৃহত্তর রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি এবং বৃহত্তর দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার আইনজীবী সমিতি।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের আইনজীবী শ. ম রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্বাচনে আইনজীবী সমন্বয়ে পরিষদের প্যানেল দেশের খ্যাতিম্যান সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। কোনোরূপ অনৈক্য বিভেদ নেই। বর্তমান কমিটির আমলে আইনজীবী কল্যাণ তহবিল পাঁচ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়।’
রেজাউল করিম আরো বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন ৪০ কোটি টাকার একটি সিদ্ধান্ত পাওয়া গেছে। বার কাউন্সিল ভবন সম্পূর্ণ সরকারি ব্যয়ে ১৫তলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবনে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দেশের আইনজীবীরা আমাদের নির্বাচিত করবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস করি।’
অপরদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার জানিয়েছেন, সারা দেশের আদালতগুলোতে সরকারের অন্যায় হস্তক্ষেপের জবাব বার কাউন্সিলের নির্বাচনের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।