কুমার দেবুল দে
অবসরে যাবার কথা ছিল ২০১৮ সালের ৩১ শে জানুয়ারি। তার আগেই নানা রকম সমীকরনের সম্মুখীন হয়ে প্রধান বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মাননীয় বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পদত্যাগপত্র নিয়েও নানারকম গুঞ্জন আছে।
একজন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিচারক হিসাবে কেমন ছিলেন তার বিচার করবেন তার লেখা রায় গুলোকে যারা রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করবেন তাদের মুল্যায়ন দিয়ে। একজন সুপ্রীম কোর্ট আঙ্গিনার তত্ত্ববধায়ক হিসাবে কেমন ছিলেন তার বিচার করা যাবে সুপ্রীম কোর্ট এলাকায় ঢুকলেই। বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসাবে কেমন ছিলেন তার বিচার করতে পারবেন তার আমলে সারা বাংলাদেশে বিচারিক দায়িত্ব পালন করা বিচারিক অফিসারদের সাথে কথা বললে। উক্ত কোন বিষয়ে উনি ফেল করেন না। যদি আপনার বিচারে তিনি ফেল করেও থাকেন তিনি যে বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি ছিলেন তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা অস্তিত্বহীন নয় তিনি বাস্তবে ছিলেন।
সিনহা সাহেবের পদত্যাগের পর থেকেই আমার ভেতর কেন যেন একটা কৌতুহল কাজ করেছে, সিনহার ঠাই দেশে না হলেও অন্তত: সুপ্রীম কোর্ট যাদুঘরে তো হবে। তাই সপ্তাহে অন্তত একবার সুপ্রীম কোর্ট জাদুঘরে যাই, নজর বুলিয়ে নিই জাদুঘরের সেই দেয়াল গুলোতে যেখানে সাবেক প্রধান বিচারপতিদের সম্মানে তাদের কার্যকাল সম্পর্কিত ছোট একটা বিবরণীসহ বড় আকারের একটা করে ছবি ঝুলানো আছে।
যেখানে ঝুলানো আছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এইচ এলিস, বিচারপতি আমিন আহমেদ চৌধুরী সহ অন্যদের, স্বৈর-শাসকদের শপথ পড়ানো সাবেক প্রধান বিচারপতিদের ছবিসহ দেশের সাবেক সকল প্রধান বিচারপতিদের ছবি।
সর্বশেষ ছবিখানা রয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের, বিচারপতি এস কে সিনহার ছবি এখনো উঠেনি দেয়ালে। পদত্যাগের প্রায় ছয়মাস ও নতুন প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেয়ার আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও উঠেনি দেয়ালে তার ছবি অথচ এই জাদুঘর স্থাপন এবং এটা সমৃদ্ধকরণে এস কে সিনহার ভুমিকাই বেশী ছিল। সিনহা সাহেব কি আদৌ জাদুঘরে স্থান পাবেন?
বিচারপতি সিনহাকে ভালবাসি বলে তার ছবি খুজতে জাদুঘরে যাইনা, একজন প্রধান বিচারপতি একজন ব্যক্তি নয়, একজন প্রধান বিচারপতি একটি প্রতিষ্ঠান। একটি প্রতিষ্ঠান তার যথাপ্রাপ্য সম্মান পাচ্ছে কিনা তা দেখতে জাদুঘরে খুঁজতে যাই।
লেখক- সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য।