রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার দুই বছর হচ্ছে আজ (২৩ এপ্রিল)। ২০১৬ সালের এই দিন সকালে নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয় তাকে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ শরিফুল ইসলামকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাকে পলাতক রেখেই আগামী ৮ মে এই মামলার রায় হতে চলছে।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুল গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক রেজাউলের মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, শরিফুল বাবার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। সে এখনও গ্রেফতার হলো না, বিষয়টা আমাদের খুব পীড়া দেয়। আমরা তো তার বিচারই আগে দেখতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই বছরের মাথায় আদালত আগামী মাসে বিচারের রায় দিবে বলে জেনেছি। আমার বাবা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুলকে গ্রেফতার করে আদালত জড়িত সবার ফাঁসির রায় দেবে, এটাই প্রত্যাশা।’
এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সদর) ইফতেখায়ের আলম বলেন, ‘শরিফুলকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে আমরা বিজ্ঞাপনও পত্রিকায় ছেপেছিলাম। কিন্তু কোনও হদিস পাইনি। আসলে সে বেঁচে আছে না মরে গেছে তার কোনও তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তার বিষয়ে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জীবিত ও মৃত আসামিদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে পেরেছি। রায়ে জীবিত আসামিদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছি।’
এদিকে, অধ্যাপক রেজাউল হত্যাকাণ্ডের দিনটিতে তার স্মরণে আজ রাবি ইংরেজি বিভাগের আয়োজনে শোক মিছিল করা হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগের সভাপতি ড. এএফ এম মাসউদ আক্তার।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয় রাবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। তিনি ‘কোমলগান্ধার’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। ‘সুন্দরম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনেরও উপদেষ্টা ছিলেন। অধ্যাপক রেজাউল একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা করছিলেন।
রেজাউল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর আট জনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক রেজাউস সাদিক। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে খায়রুল ইসলাম বাঁধন, নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান ও তারেক হাসান ওরফে নিলু ওরফে ওসমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। অভিযুক্ত অন্যরা হলো— বগুড়ার শিবগঞ্জের মাসকাওয়াত হাসান ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে সাকিব, নীলফামারির মিয়াপাড়ার রহমত উল্লাহ, রাজশাহী মহানগরীর নারিকেলবাড়িয়া এলাকার আবদুস সাত্তার ও তার ছেলে রিপন আলী, রাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুল এখনও পলাতক। আবদুস সাত্তার রয়েছে জামিনে। আর বাকি আসামিরা কারাগারে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক রেজাউলের ছাত্র ছিল শরিফুল। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় তার বাড়ি। অধ্যাপক রেজাউলের গ্রামের বাড়িও বাগমারায়। তাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই শরিফুল পলাতক। অধ্যাপক রেজাউল হত্যার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আটক এক আইএস জঙ্গির সঙ্গে শরিফুলের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। তাই শরিফুল ভারতেই পালিয়ে আছে বলে ধারণা করছে রাজশাহীর পুলিশ। এর আগে, শরিফুলকে ধরিয়ে দিতে রাজশাহী মহানগর পুলিশ দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তার হদিস এখনও পাওয়া যায়নি।