আসুন সবাই মিলে ১৭ মে তারিখে ‘বাংলাদেশ আইনজীবী দিবস’ বা ‘বাংলাদেশ অ্যাডভোকেটস ডে’ হিসেবে দিনটি পালন করি। কারণ ১৭ মে ১৯৭২ তারিখে ‘দি লিগ্যাল প্রাকটিশনারস অ্যান্ড বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইন’ পাশ হয়। ইতিহাসের আলোকে বিশ্লেষণ করলে, এই দিনটি আমাদের বাংলাদেশের আইনজীবীদের জন্য বিশেষ একটি দিন। কারণ আমাদের উপ মহাদেশে ব্রিটিশ আইন প্রবর্তন হওয়ার পর থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আইনজীবীদের অবস্থা ও মর্যাদা আদিকালে ভাল অবস্থায় ছিল না। তখন আইনজীবীরা আইন পেশায় ছিলেন ঠিকই কিন্তু আমাদের এখনকার মত অবস্থা তাঁদের ছিল না। এক সময় মুন্সেফ বা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবরা আইনজীবীদের সনদ দিতেন আবার আইনজীবীদের সনদ বাতিল করার ক্ষমতাও তাঁদের ছিল। প্রতি বৎসর মুন্সেফ বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সনদ জমা দিয়ে আবার ফি দিয়ে, অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সনদ নবায়ন করতে হত। তখনকার আদালতই, মামলা প্রতি আইনজীবীদের ফি নির্ধারণ করে দিত। পরে বিভিন্ন সময়ে ১৮৪৬ খ্রিঃ, ১৮৫৭ খ্রিঃ, ১৮৭৯ খ্রিঃ, ১৮৮৮ খ্রি, ১৮৯৯ খ্রিঃ, আইনজীবী আইনের অনেক পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটে। আইজিবিদের যে কোন পরিমাণ ফি নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। নারীদের আইনজীবী হওয়ার পথ করে দেওয়া হয়। হিন্দু মুসলিম যে সমস্যা আইনজীবী হওয়ার ক্ষেত্রে ছিল তা আইনের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। অতঃপর আইনজীবী আইন ১৯৬৫ পাশ হয়। প্রতিটি ধাপে ধাপে আইনজীবীদের মান মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। বার কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে আইনজীবীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রনের অধিকার দেওয়া হয়। ১৯৬৫ সালের ‘দি লিগ্যাল প্রাকটিশনারস অ্যান্ড বার কাউন্সিল অ্যাক্ট’ ছিল আইনজীবীদের স্বাধীনতার আইন। এক কথায় এই আইনের মাধ্যমে আইনজীবীরা স্বাধীন স্বত্বা বা প্রতিষ্ঠান হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৭১ সনে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর, বাংলাদেশ সরকার ১৮৭৯ ও ১৯৬৫ খ্রিঃ আইনজীবী আইনের আলোকে, ‘দি লিগ্যাল প্রাকটিশনারস অ্যান্ড বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২’ আইন টি করা হয়। ১৯৭২ খ্রিঃ ১৭ মে তারিখে তদানিন্তন রাষ্ট্রপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী স্বাক্ষর করেন। আমি মনে করি, পেশাদার আইনজীবী হিসাবে, দল মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল আইনজীবী এই ১৭ই মে দিনটি, ‘বাংলাদেশ অ্যাডভোকেটস ডে’ বা ‘বাংলাদেশ আইনজীবী দিবস’ হিসাবে পালন করতে পারি। উল্লেখ্য ভারত, আমেরিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তাঁদের মত করে তারা আইনজীবী দিবস পালন করে থাকেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী হেলাল উদ্দিনের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত