সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দলের বড় বড় নেতাদের ‘ব্যক্তিগত স্বার্থের কাছে দলীয় স্বার্থ’ পরাজিত হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে আওয়ামী লীগের অনুসন্ধান কমিটি।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ চিত্র বেরিয়ে এসেছে। পাশাপাশি অধিকাংশ নেতাই দলীয় শৃঙ্খলা না মানায় ‘অন্তঃকোন্দলের চাপ’ দৃশ্যমান হয়েছে কমিটির কাছে।
অনুসন্ধান কমিটির একাধিক নেতার কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৮-১৯ সেশনের নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি পদে জয় পান বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা। ২০১৭-১৮ সেশনের মেয়াদেও সভাপতি-সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তারা। অন্যদিকে সহ-সম্পাদকসহ চারটি পদে জয় পান সরকার সমর্থক আইনজীবীরা।
নির্বাচনে সভাপতি পদে বিজয়ী হন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলের অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকে দাঁড়ানো অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের চেয়ে ৫৪ ভোট বেশি পান। এর আগের মেয়াদেও সভাপতি নির্বাচিত হন জয়নুল আবেদীন।
সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি ভোট পান দুই হাজার ৬১৬টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের অ্যাডভোকেট এস কে মো. মোরসেদ। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন টানা ষষ্ঠবারের মতো বিজয়ী হন।
গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের ভরাডুবি, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয় এবং সারাদেশে দলীয় দ্বন্দ্ব-কোন্দলের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহর নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে আরও রয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।
কমিটি গঠনের পরের দিন অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে অনুসন্ধান কমিটি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধনে প্রার্থীদের ডেকে কথা বলেন। পরাজিত প্রার্থীদের কাছ থেকে পরাজয়ের কারণগুলো জেনে নেয় কমিটি।
অনুসন্ধান কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সৈয়দ রেজাউর রহমান, নজীবুল্লাহ হীরু ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। গত ৭ এপ্রিল দলের আট বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে অনুসন্ধান কমিটি।
অনুসন্ধান কমিটির তথ্য মতে, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে চারটি বৈঠক করেন তারা। বৈঠকগুলোতে অংশ নেয়া নেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই করা হয়। এরই মধ্যে বাংলা নতুন বছর এবং গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের ব্যস্ততায় অনুসন্ধান কমিটির কাজে কিছুটা গতি হারায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনুসন্ধান কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আমাদের দলের ভেতরে অনেকেই দলীয় শৃঙ্খলা মানেন না, সবাই এমপি হতে চান, সবাই মন্ত্রী হতে চান। এসব কারণে তারা নিজের স্বার্থটা দলের স্বার্থের চেয়ে বড় করে দেখেন। এ জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। ওই নির্বাচনে দলের অনেক বড় বড় আইনজীবী দলের সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন অথবা নীরব ভূমিকা পালন করেছেন।’
কমিটির সদস্যদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতা থাকায় সারাদেশেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের চিত্র ভয়াবহ। নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতার নামে দলের ক্ষতি করছেন এসব নেতারা। আরও দু-একটা বৈঠক করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পরাজয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হবে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে।
ওই প্রতিবেদনে জাতীয় নির্বাচনের আগে অভ্যন্তরীণ এসব দ্বন্দ্বে জড়িতদের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে কড়া বার্তা দিতে দলীয় প্রধানের কাছে সুপারিশ করবে অনুসন্ধান কমিটি।
অনুসন্ধান কমিটির প্রধান ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আপনি কি মনে করছেন প্রার্থী নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল? এবার যদি আমাকে হারিয়ে দেন তাহলে আগামীতে আপনি সুযোগ পাবেন। অনেক বড় বড় নাম এসেছে যারা দলীয় ফোরামে থাকা সত্ত্বেও তাদের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল সেটা তো তারা রাখেই নাই বরং নেতিবাচক অনেক কথাবার্তা বলেছেন। আশা করছি শিগগিরই আমরা প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’ জাগোনিউজ