২৬ বছরের আইনি লড়াই, রায়ের দুই বছর পরও ক্ষতিপূরণ পায়নি পরিবার

 

দৈনিক সংবাদ-এর সাবেক বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মন্টু দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর ২৮ বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি লড়াইয়ে গেছে ২৬ বছর। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী বাদীপক্ষ (নিহত ব্যক্তির স্ত্রী) ১ কোটি ৭১ লাখ ৪৭ হাজার ৮ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। রায়ের পর আরও দুই বছর পার হলেও ক্ষতিপূরণ পায়নি পরিবার, শেষ হয়নি তাঁদের অপেক্ষার পালা।

মামলার বাদী ও নিহত ব্যক্তির স্ত্রী রওশন আখতার বলেন, ‘মূল মামলা করার পর থেকে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পেতে কেটে গেছে ২৬ বছর। আপিল বিভাগের রায়ের পর ওই অর্থ আদায়ে বিচারিক আদালতে মামলা করা হয়। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করা যায়নি। ক্ষতিপূরণের অর্থ কবে পাব?’ এই অর্থ পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

১৯৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর শান্তিনগরের আনন্দ ভবনের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাংলাদেশ বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পানীয়বোঝাই একটি মিনিট্রাক মোজাম্মেলকে ধাক্কা দেয়। তিনি মাথা ও মুখমণ্ডলে আঘাত পেলে স্থানীয় লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ১৩ দিন হাসপাতালে থেকে ১৬ ডিসেম্বর মারা যান তিনি।

আইনজীবী সূত্র বলেছে, ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রী রওশন আখতার ৩ কোটি ৫২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ২০ মার্চ ঢাকার তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালত এক রায়ে বাংলাদেশ বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন। ৩০ দিনের মধ্যে ওই অর্থ দিতে বলা হয়। চালকের ভুলে মালিকের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো বিধান নেই উল্লেখ করে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ বেভারেজ হাইকোর্টে আপিল করে। ২০১০ সালের ১১ মে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ কোটি ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮ টাকা টাকা দেওয়ার ডিক্রি দেন।

আইনজীবী সূত্র বলেছে, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে বাংলাদেশ বেভারেজ। শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জুলাই আপিল বিভাগের রায়ে ক্ষতিপূরণের অর্থ পুনর্মূল্যায়ন করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে ওই রায় পূর্ণাঙ্গ আকারে স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রকাশিত না হওয়ায় ২০১৬ সালের এপ্রিলে পুনঃশুনানি হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণসহ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেন।

সর্বশেষ অবস্থা জানতে যোগাযোগ করা হয় রওশন আখতারের আইনজীবী মো. খলিলুর রহমানের সঙ্গে। গত সোমবার খলিলুর বলেন, দুই বছর আগে আপিল বিভাগ ১ কোটি ৭১ লাখ ৪৭ হাজার ৮ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায় দেন।

তবে বিবাদীপক্ষ ওই অর্থ দেয়নি। তাই অর্থ আদায়ের জন্য ডিক্রি জারি মামলা করা হয়। বিচারিক আদালত বিবাদীপক্ষের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন। এরপর ওই কোম্পানির তেজগাঁওয়ের পাঁচ বিঘা জায়গা নিলামে বিক্রির নির্দেশ দিয়ে ওই অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্ত দেন আদালত। তবে দুই দফা নিলাম ডাকা হলেও ক্রেতা না পাওয়ায় ওই জায়গা বিক্রি করা যাচ্ছে না।

মোজাম্মেল হোসেন ১৯৪৫ সালের ১৫ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগে স্নাতকোত্তর করার পর সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেন তিনি। ১৯৬৮ সালে তিনি দৈনিক সংবাদ-এ সহসম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন, পরে বার্তা সম্পাদক হন। লেখক ও ন্যাটকার হিসেবে পরিচিত এই সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন। সূত্র: প্রথম আলো