বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানোর অনুমতি চেয়েছে কারা অধিদফতর। কারা চিকিৎসক ও সিভিল সার্জনের সুপারিশ অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। এতে কারাগারের দু’জন চিকিৎসক ও সিভিল সার্জনের স্বাক্ষর রয়েছে।
চিঠিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড অথবা এ্যাপোলো হাসপাতাল লিমিটেডে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার ইচ্ছা অনুযায়ীই এ দুটি হাসপাতালের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। রোববার পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বলে কারা সূত্রে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে কারাসংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাও পরিষ্কার করে কিছু বলতে রাজি হননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও কিছু জানাননি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে টেলিফোনে বলেন, ‘আমি ৫-৬ দিন ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছি। এ ক’দিন দেশে কী হয়েছে তা বলতে পারব না।’
স্বরাষ্ট্র সচিব (সুরক্ষা) ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে ডিআইজি (প্রিজন্স) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কয়েকদিন ঢাকার বাইরে ছিলাম। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না।’
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ। মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের চিঠি দেয়ার এখতিয়ার কারা অধিদফতরের রয়েছে। তবে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে কোনো চিঠি দেয়া হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।’
বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। ২২ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সচিবালয়ে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল দেখা করে এ দাবি জানায়। শনিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর তার উন্নত চিকিৎসার দাবি জানায়।
কারা অধিদফতরের চিঠির বিষয়ে রোববার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এমন একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেছে। কিন্তু এখনও মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। আমরা প্রতিদিনই চেয়ারপারসনের চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সে অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশিবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এখনও তিনি সেখানে আছেন। তিনি রিউ মাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অসটিও আর্থ্রাটিস ও লাম্বারে ব্যথাসহ নানা রোগে ভুগছেন। এজন্য তার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড গঠন করে কারা অধিদফতর। বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওইদিনই তাকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে নেয়া হয়।