মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ সম্মাননা ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। বিশেষ সম্মাননা ভাতা বাবদ ‘বিজয় দিবস ভাতা’ নামে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা বছরে এককালীন ৫ হাজার টাকা পাবেন।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ জুন) প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতা দেওয়ার সময় এ তথ্য জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় গত ৯ বছরে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে একটি তালিকাও উপস্থাপন করেছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সূর্যসন্তানদের জন্য বিশেষ সম্মাননা ভাতা বাবদ ‘বিজয় দিবস ভাতা’ নামে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা বছরে এককালীন ৫ হাজার টাকা পাবেন। ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধাদের এই সম্মানী ভাতা দ্রুত তাদের হাতে পৌঁছানো হবে।
উল্লেখ্য, সরকার সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নতুন করে তিনটি ভাতা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর একটি ‘নববর্ষ ভাতা’ ইতোমধ্যেই চালু করা হয়েছে। এই বাজেটে চালু হচ্ছে ‘বিজয় দিবস’ ভাতা।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সব সরকারি হাসপাতাল ও ১৬টি বিশেষায়িত হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসা নেওয়া, সম্মানী ভাতা দ্রুত পৌঁছানোর জন্য ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতি ব্যবহার ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সুবিধা দিতে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া রয়েছে ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে সরকারের বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ছে ২৭৫ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশে বিদ্যমান ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধা প্রতিবছর বিজয় দিবস ভাতা বাবদ এককালীন ৫ হাজার টাকা পাবেন।
জানা গেছে, নতুন বাজেটে বিজয় দিবস ভাতা দিতে সরকারের বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হবে ১০০ কোটি টাকা। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা ২ হাজার টাকা করে নববর্ষ ভাতা হিসেবে এ বছরই প্রথম পাচ্ছেন। এর জন্য সরকারকে বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে ৪০ কোটি টাকা। আর দুই ঈদে দু’টি বোনাস খাতে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৪০০ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (৭ জুন- ২০১৮) দশম জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে পেশ করছেন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার জীবনের ১২তম বাজেট পেশ করবেন। আসন্ন বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সব ধরনের ভাতাসহ উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় মেটাতে আগামী বাজেটে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে ৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলতি বাজেটে এ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা।
আর্থিক দিক বিশ্লেষণ করলে নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ছে পৌনে ৩শ’কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচির আওতায় ২০০৯ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা বাবদ মাসিক ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। সুবিধাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪২ হাজার থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ করা হয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠদের সম্মানী ভাতা ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার, বীর উত্তমদের ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার, বীরবিক্রমদের আট হাজার থেকে ২০ হাজার এবং বীরপ্রতীকদের ছয় হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণির সাত হাজার ৮৩৮ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, শহীদ পরিবার ও বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারের মাসিক রাষ্ট্রীয় ভাতার পরিমাণ প্রায় ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
বর্তমানে প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা পাবেন। এর বাইরে দুই ঈদে দুটি বোনাস পাচ্ছেন। প্রতিটি বোনাসের পরিমাণ এক মাসের ভাতার সমান।