অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের আচরণ ন্যায়বিচারের পক্ষে না বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। একইসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলের এমন আচরণে তিনি মর্মাহত এবং এটা দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
কুমিল্লায় নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল সময় চাওয়ায় বৃহস্পতিবার (৭ জুন) খন্দকার মাহবুব হোসেন এ অভিযোগ করেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে খালেদা জিয়ার কারাবরণ দীর্ঘায়িত করার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল এ ধরনের আচরণ করছেন। এ আচরণ কখনও ন্যায়বিচারের পক্ষে না। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক আচরণ।’
তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার এক আবেদনে (কুমিল্লায় নাশকতার অভিযোগে বিষয়ে ক্ষমতা আইনের মামলা) জজ কোর্ট বলেছে, ‘যেহেতু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে, কিন্তু ওয়ারেন্ট তামিল হয়নি। সেহেতু তার জামিন আবেদন শোনা যাবে না।’ এর বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে আবেদন করেছি।’’
প্রসঙ্গত, এর আগে বুধবার (৬ জুন) মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগে দায়ের করা মানহানির এক মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকরসহ জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করতে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট ভুল পথে পরিচালিত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ মামলার সংশ্লিষ্ট আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলেন আদালত। আদেশ প্রদানকারী বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বাক্ষরের পর বুধবারই (৬ জুন) রায়টি লিখিত আকারে প্রকাশিত হয়।
উক্ত রায়ের প্রসঙ্গ টেনে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের আদালত থেকে একটি রায় বেরিয়েছে। সেখানে তিনি আদেশ দিয়েছেন, আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল হয় না। এ কারণে জামিন আবেদন শোনা যাবে না। এটা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভুল পদক্ষেপ। সে পদক্ষেপ আইনগতভাবে সঠিক না। সেজন্য বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের আদালত আমাদের আবেদনটি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং জামিন আবেদনের শুনানি করতে বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আজকের আবেদনেও সেই একই আদেশে চেয়েছিলাম। যাতে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে যায়। কারণ তিনি একজন বৃদ্ধা নারী। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন মামলার আসামি নারী হলে তাকে আদালত জামিন দেন। এ কারণে আমাদের আসামি জামিনযোগ্য, জামিন পেতে পারেন।’
খন্দকার মাহবুব হোসেন আরও বলেন, ‘‘আমাদের লজ্জা হয়, আমাদের ঘৃণা হয়। আজ আদালত বলেছেন, অন্য একটি বেঞ্চ (বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ) যে আদেশ দিয়েছেন, ‘সেই আদেশ আমরাও কি পালন করতে বাধ্য?’ আমরাও আদালতকে বললাম, ‘হ্যাঁ, আপনারা বাধ্য। আপনারা আমাদের জামিন আবেদনটি সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পাঠিয়ে দিন। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হাজির হলেন। তিনি বললেন, ‘হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চের রায়টি এখনও আমার পড়া সম্ভব হয়নি। ওই রায়টি আমাকে দেখতে হবে, তারপর এ মামলায় শুনানি হবে।’ এ কারণে আদালত আগামী রবিবার (১০ জুন) মামলার শুনানির পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছেন।’’
শুনানির জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের সময় আবেদনের প্রসঙ্গ টেনে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা আদালতকে বলেছি, অ্যাটর্নি জেনারেলের এমন আচরণে আমরা মর্মাহত এবং এটা দুঃখজনক। যেখানে সব সংবাদপত্রে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের ভুল আচরণের পদক্ষেপের বিষয়টি এসেছে, অথচ এটা তার জানা নেই। আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলকে সে রায়ের কপিও দিয়েছি।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘উনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) ইচ্ছাকৃতভাবে খালেদা জিয়ার কারাবরণ দীর্ঘায়িত করার জন্য এ ধরনের আচরণ করছেন। এ আচরণ কখনও ন্যায়বিচারের পক্ষে না। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক আচরণ।’
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানির জন্য সময় চান। এরপর শুনানি আগামী রবিবার (১০ জুন) পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত।