গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানির অভিযোগে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিপিডিসি) পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রোববার অভিযোগ শুনানি শেষে ডিপিডিসিকে জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অধিদফতরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল।
তিনি বলেন, ডিপিডিসির বিরুদ্ধে দুইজন গ্রাহকের করা কারচুপি, হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুযায়ী দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা করে মোট পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে ভোক্তা আইন অনুযায়ী দুই গ্রাহক পুরস্কার হিসেবে পাবেন ৬২ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট এক লাখ ২৫ হাজার টাকা।
অধিদফতরে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ার ডিপিডিসির গ্রাহক মো. রনি ইসলাম ২০১৫ সালে ১২ মাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছেন। ২০১৬ সালের ১৮ মে একটি প্রত্যয়নপত্র দেয় ডিপিডিসি। যেখানে লেখা ছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ। কিন্তু ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডিপিডিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৫ সালের এপ্রিল ও আগস্ট দুই মাসে তিন হাজার ৭৭২ ইউনিট বিল পরিশোধ হয়নি যার মূল্য ৩৮ হাজার ৮১৮ টাকা। বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎলাইন কেটে দেয়া হবে। ডিপিডিসির অফিসে বিষয়টি জানানোর পরও কোনো সুরাহ হয়নি। পরে এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করা হয়। ভোক্তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধিদফতরের শুনানিতে বিষয়টি প্রমাণ হওয়ায় ডিপিডিসিকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অপরদিকে ডিপিডিসির বিরুদ্ধে কারচুপি করে গ্রাহক ঠকানোর অভিযোগ করেন রামপুরা বনশ্রী এলাকার আব্দুল হান্নান খান। অভিযোগে তিনি বলেন, আমার বাসায় মাসে গড়ে ১০০ থেকে ১৩০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়; যেখানে বিলবাবদ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু গত বছর জুলাই মাসে জিরো (শূন্য) ইউনিট দেখিয়ে ১২১ টাকা বিল করে। তার পরবর্তী মাস আগস্টে মিটার রিডিং না দেখেই ৩৬৫ ইউনিটের দুই হাজার ৫৮ টাকা বিল করা হয়। এছাড়া প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য পাঁচ টাকা ১৩ পয়সা হলেও জুলাই ও আগস্ট মাসে ডিপিডিসি কারচুপি করে নিয়েছে পাঁচ টাকা ৬৫ পয়সা।
অধিদফতরের শুনানিতে ডিপিডিসির বিরুদ্ধে করা এ অভিযোগটি প্রমাণ হওয়ায় আরও আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ, উৎফুল্ল গ্রাহক এমন স্লোগান থাকলেও প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছে গ্রাহক। দুর্নীতি করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার ও হয়রানির অভিযোগে ডিপিডিসির মতো প্রতিষ্ঠানে এই প্রথম জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিদফতর ভোক্তা আইন বাস্তবায়নে কাজ করছে। এ জন্য কোথায় হয়রানির শিকার, প্রতারণা বা ভোক্তা অধিকার খর্ব হচ্ছে এমন কার্যকলাপ দেখলে অধিদফতরে অভিযোগ করতে হবে। অধিদফতর সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এ জন্য সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ২৫ অক্টোবর কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর অধীনে গঠিত হয় ডিপিডিসি। কাজ শুরু করে ২০০৭ সালের ১৪ মে থেকে। ডেসা থেকে সব সম্পদ ও দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে ১ জুলাই, ২০০৮ থেকে কোম্পানি বাণিজ্যিকভাবে অপারেশন শুরু করে সংস্থাটি। ২০১৮ সালের জানুয়ারি শেষে সংস্থার গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮৭ জনে।
(জাগো নিউজ)