সারাদেশে চলা ফিটনেসহীন যানবাহনের তালিকা করতে আদালতের নির্দেশে ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
সড়ক পরবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধিকে আহ্বায়ক করে এবং বিআরটিএ এর সচিবকে সদস্য সচিব ঘোষণা করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর, হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন,সড়ক ও জনপদ অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিফতর, বুয়েটের যন্ত্র প্রকৌশলী বিভাগ, অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির একজন করে প্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট গবেষক ও কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
আজ রোববার (৪ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত মামলার রিটকারী আইনজীবী তানভির আহমেদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আইনজীবী তানভির আহমেদ জানান, ‘সারাদেশের ফিটনেসবিহীন পরিবহনের তালিকা তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ ছিল আদালতের। সেই নির্দেশনা অনুসারে গত ২৩ অক্টোবর বিআরটিএ এর চেয়ারম্যান ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটিকে সারাদেশে যানবাহনের ভেতর এবং বাইরের ফিটনেস দেখে একটি তালিকা তৈরি করে আদালতে দাখিল করবেন।’
এর আগে গত ৩১ জুলাই বিশেষজ্ঞ কমিটির দ্বারা ফিটনেসহীন পরিবহনের ওপর জরিপ চালিয়ে তিন মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সচিবের নেতৃত্বে অভিজ্ঞদের দ্বারা কমপক্ষে ১৫ সদস্যের একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আদালত। পরে ওই কমিটির দ্বারা ফিটনেসহীন পরিবহনের ওপর জরিপ করে তিন মাসের মধ্যে তা প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালত রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী তানভির আহমেদ। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ।
এ প্রসঙ্গে রিটকারী আইনজীবী তানভির আহমেদ জানান, এ মামলার শুনানিকালে তারেক মাসুদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সংক্রান্ত মামলার সিআইডি রিপোর্ট আদালতকে দেখিয়েছি। ওই রিপোর্টে গাড়ীর ফিটনেসের অভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে। তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজিবের মামলার ছবিও আদালতকে দেখিয়েছি। সে বাসটিও আনফিট ছিলো। এছাড়াও গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হওয়ার সঙ্গে জড়িত বাসের ছবিও আদালতকে দেখিয়েছি। দুর্ঘটনার শিকার এসব বাসের একটিতেও ফিটনেস ছিল না। তাই এ বিষয়ে আদালতে রুল জারিসহ নির্দেশনা চাওয়া হয়।
পরে রিটের শুনানি নিয়ে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চান আদালত।
সেসময় চার সপ্তাহের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের (বিআরটিএ) পরিচালক, বিআরটিএ ইনফোরসমেন্ট বিভাগের পরিচালক ও পুলিশের আইজিকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ থেকে ফিটনেসহীন পরিবহনের তালিকা করতে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এর আগে গত ৯ জুলাই সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নোটিশ পাঠান অ্যাডভোকেট তানভির আহমেদ। নোটিশে দশ দিনের মধ্যে এর জবাব চাওয়া হয়। কিন্তু জবাব না পেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। গত ২৬ জুলাই হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করা হয়। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত নির্দেশনাসহ রুল জারি করেন।