পরীক্ষাকেন্দ্র যাতে অবাধে নকল চালানো যায়, সে ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। এ জন্য উপজেলা কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পরীক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করতে চেয়েছিলেন। দিতে চেয়েছিলেন ‘ঘুষ’। এমন অভিযোগ দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের তিন মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই তিন শিক্ষককে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে পুলিশে দেওয়া হয়েছে।
নবাবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর মো.শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, জুনিয়র দাখিল পরীক্ষায় (জেডিসি) নকলের সুযোগ নিতে মাদ্রাসার ওই তিন শিক্ষক আজ ‘ঘুষ’ দেওয়ার চেষ্টা চালান। তাঁর তথ্যমতে, দুপুর ১২টার দিকে শফিকুল ইসলামের কক্ষে গিয়ে তাঁরা এই ‘ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা’ করেন।
তিন শিক্ষককে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন।
আটক তিন মাদ্রাসা শিক্ষক হলেন জেডিসি পরীক্ষার কেন্দ্রসচিব শিবপুর মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নুরুল ইসলাম, নবাবগঞ্জ বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা আবদুল্লাহ ও ইটাখুর বড় বাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা রিয়াজুল ইসলাম।
শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, নবাবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে জেডিসি পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, জেডিসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে আটক করা ওই তিন শিক্ষকের সহযোগিতায় নকলের চেষ্টা চলছিল। কিন্তু ইউএনও মো. মশিউর রহমান এবং তাঁর তৎপরতায় কেন্দ্রে নকল বন্ধ থাকে। ৩ নভেম্বর আরবি পরীক্ষার দিন ওই তিন শিক্ষকের সহযোগিতায় প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে অন্য শিক্ষকেরা উত্তরপত্র তৈরি করার সময় তিনি হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এ ঘটনায় পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে পাঁচ শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, এ ঘটনার পর ওই দিন সন্ধ্যা থেকে তিন শিক্ষক ইউএনও এবং তাঁকে ‘ম্যানেজ’ করতে উঠেপড়ে লাগেন। নবাবগঞ্জ বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা আবদুল্লাহ তাঁকে ২০ হাজার টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেন। তিনি বিষয়টি ইউএনওকে জানান। আজ দুপুর ১২টার দিকে আবদুল্লাহ তাঁকে ঘুষ দেওয়ার জন্য এলে তাঁর মাধ্যমে খবর পেয়ে ইউএনও পুলিশ ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পারুল বেগমকে নিয়ে ঘুষের টাকাসহ আবদুল্লাহকে আটক করেন। পরে আবদুল্লাহর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নুরুল ইসলাম ও রিয়াজুলকে আটক করা হয়। তাঁরা তিনজন ঘুষ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার জানান, এ ঘটনায় ইনস্ট্রাক্টর বাদী হয়ে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
ইউএনও মশিউর রহমান বলেন, শিক্ষকদের নকলে সহায়তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পরীক্ষার শুরুতেই তিনি এ বিষয়ে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেছিলেন। এরপরও ওই তিন শিক্ষক পরীক্ষায় নকল চালানোর চেষ্টা করতে থাকেন।