নাইকো দুর্নীতি মামলায় আজ বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের এজলাসে আনার পর শুনানি শেষে কারাগারেই রাখা হয়েছে। এ মামলার শুনানি শেষে কথা বলেছেন উভয়পক্ষের আইনজীবীরা।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, আদালতে খালেদা জিয়া অসুস্থ ছিলেন, তার সঙ্গে আইনজীবী হিসেবে আলাদা কথা বলতে পারেননি তারা।
আর এ মামলায় খালেদা জিয়া বলেছেন, একই অভিযোগে আগের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা খারিজ হলে তার বিরুদ্ধে এই মামলা চলতে পারে না।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, আদালতে খালেদা জিয়া উৎফুল্ল ছিলেন। আর আগের প্রধানমন্ত্রী ও তার বিরুদ্ধে মামলার গ্রাউন্ড ভিন্ন। উচ্চ আদালত বলেছেন এই মামলার মেরিট রয়েছে। তাই মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
মামলাটির শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন, খালেদা জিয়া আদালতে অসুস্থ ছিলেন। তিনি এজলাসে বসে বারবার কাশি দিচ্ছিলেন।
মামলার শুনানিতে খালেদা জিয়া আদালতকে কী বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আদালতে নাইকো ইস্যুতে আগের সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আগের সরকারের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) যে কাজ অসম্পূর্ণ রেখে গেছেন, সেটার ধারাবাহিকতা তিনি রক্ষা করে নাইকোর সঙ্গে গ্যাস বিক্রির চুক্তির কাজটি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন মাত্র। কিন্তু নাইকো ইস্যুতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি আদালত খারিজ করে দিলেও তার বিরুদ্ধে একই মামলা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তিনি কোনও অন্যায় করেননি। তাই এ মামলায় যদি তাকে আসামি রাখা হয় তাহলে আগের প্রধানমন্ত্রী আসামি থাকবেন না কেন?
এছাড়াও মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী হয়েও খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারা কথাবার্তা বলতে পারেননি বলে সানাউল্লাহ মিয়াসহ অপর আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন।
তবে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া আদালতে যে দাবি করেছেন সেটা সঠিক নয়। কারণ, আগের সরকারের যেকোনও কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেই হবে- এমন কোনও বক্তব্য বা যুক্তি টেকে না। আগের সরকার যে মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) করেছিল, পরে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া তেমনটা করেননি বলে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আর হাইকোর্টে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। পরে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলাটি দায়ের হয় সেটিও উচ্চ আদালতে উপস্থাপন করা হলে মামলাটির মেরিট রয়েছে বলে আদালত এর বিচার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ফলে দুই মামলার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো ঠিক হবে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়ার খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ার আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হ্যাঁ, তারা আবেদন করেছেন। আদালত তাদের বলেছেন এ ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে। সেই সঙ্গে এ আবেদন গ্রহণ করে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ সময় খালেদা জিয়াকে অসুস্থতা সত্ত্বেও জোর করে আদালতে আনা হয়েছে- বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, এ মামলায় দুদকের প্রসিকিউটর হিসেবে আমি বলতে পারি যে তাকে হসপিটাল (বিএসএমএমইউ) থেকে এখানে আনা হয়েছে এবং রিলিজ অর্ডারের মাধ্যমেই আনা হয়েছে। ডাক্তার যারা আছেন, যারা তাকে রিলিজ দিয়েছেন, তারা এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। আমি আদালতে তাকে দেখেছি। ভালো, উৎফুল্ল এবং তিনি বসেছিলেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে জবাব দিয়েছেন এবং কথাবার্তাও বলছিলেন।