‘জাগো তারুণ্য, রুখো জঙ্গিবাদ’ শিরোনামে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম বুবধার (৭ নভেম্বর) আয়োজন করা হয়েছিল রাজধানীর সেন্ট্রাল ল’ কলেজে। এবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র এবং ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, এমপি। সেন্ট্রাল ল’ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাহারা খাতুনকে পেয়ে কলেজ আনন্দমুখর হয় ওঠে।
সাবেক এই মন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই এই কলেজে তার শিক্ষাজীবনের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন। বলেন, ‘সেন্ট্রাল ল’ কলেজ আমাদের কলেজ।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কাছে গেলে মনে হতো- আমাকেই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। প্রত্যেকেরই তাই। বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশ দিয়ে গেছেন। কিন্তু তার লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে যেতে পারেননি। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে। তখন মামলাতো দূরের কথা একটা জিডিও করতে পারিনি আমরা। হত্যার পর খুনি মোশতাক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ নামে একটি আইন পাস করেন, যেন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা না যায়। ’৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এই আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ শুরু করেন। সোনার বাংলার স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।’
জঙ্গিবাদ বিষয়ে এই নেতা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ বর্তমান বিশ্বের জটিল এক বাস্তবতা। তাই গবেষণা ও বিশ্লেষণে এর গুরুত্ব বাড়ছে। ধর্মীয় উন্মাদনা এবং উগ্রতা জঙ্গিবাদ বা জঙ্গি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। ভ্রান্ত আর্দশের উপর ভর করে তরুণরাও জঙ্গি হয়ে ওঠে। আর এই আদর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছে কতিপয় গোষ্ঠী, ধর্মের নামে তরুণদের মিথ্যা ধর্মীয় ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে নিচ্ছে।
তবে জননেত্রী শেখ হাসিনার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলাবেন্স নীতি সফলতার সাথে এদেশ থেকে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব নিমূর্ল করেছে। যে চেতনার উপর ভর করে এদেশে জঙ্গিবাদ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল সেই চেতনাকে রুখতে এবং এর ভয়ঙ্কর পরিণতি সম্পর্কে সামাজিক জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। কোনোভাবেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে বাধাগ্রস্ত করতে দেওয়া যাবে না। তাই তরুণদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।’
সুচিন্তা ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ. আরাফাতকে ধন্যবাদ জানিয়ে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন তার বক্তব্য শেষ করেন।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ও এই কার্যক্রমের সমন্বয়ক কানতারা খান। শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ধর্ম প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং অধিকার। সেই বিশ্বাস ও অনুভূতির জায়গাটিতে তারা আঘাত করছে ক্ষমতা ও বাণিজ্যিক স্বার্থের লোভে। যার সঙ্গে ধর্মের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই।
ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এই সবকিছুই সম্ভব হয়েছে সে সময়ের তরুণদের হাত ধরে। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বে যত বড় বড় অর্জন রয়েছে তার পেছনে তরুণদেরই অবদান রয়েছে। তাই সুচিন্তার এই শ্লোগান- ‘জাগো তারুণ্য, রুখো জঙ্গিবাদ’।’
বক্তব্য রাখেন সেন্ট্রাল ল’ কলেজের আরেক প্রাক্তন কৃতি শিক্ষার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নাসরিন সিদ্দিকা লিনা। তিনি বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসকে যেভাবে বিকৃত করা হয়েছিল তা মনে করলে এখনো আঁৎকে উঠি। ভাবতাম বাবা মিথ্যা বলছে, না বই মিথ্যা লিখেছে? পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আযমদের, রাজাকারদের মন্ত্রী বানানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তান থেকে জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ করা হয়েছে। এসবই করেছে জিয়াউর রহমান। তারাইতো এদেশে জঙ্গিবাদের বীজ বুনে গেছে। জামায়াত-শিবির মানেই জঙ্গিবাদ। তারাইতো এদেশের স্বাধীনতা চায়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য সাহস, নেতৃত্ব এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কারণে এদেশ থেকে বড় বড় রাঘব বোয়াল নির্মূল হয়েছে। রয়ে গেয়ে আগাছা ও তাদের স্বাধীনতাবিরোধী চেতনা। এসব নির্মুলে তারুণ্যকে জাগতে হবে। কারণ তরুণরা জেগে উঠলেই সকল অপশক্তি নির্মুল হবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সেন্ট্রাল ল’ কলেজের প্রিন্সিপাল মো. জাকির হোসেন। তার বক্তব্যের আগে সুচিন্তা’র গবেষণা সেলের পক্ষ থেকে আশরাফুল আলম শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদ সমর্থন-অসমর্থন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আজ সারাবেলা’র সম্পাদক জববার হোসেন।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদের মনোজগত জাগ্রতকরণ ও জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় এক বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেমিনার করে আসছে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন।