পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি নিয়ে আট বছর পার করা খ্রিষ্টান নারী আসিয়া বিবি অবশেষে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। উচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ড বাতিল হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় মুলতানের কারাগার থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী সাইফ মুলুক।
আজ বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানানো হয়, কারাগার থেকে মুক্তির পর উড়োজাহাজে ওঠেন আসিয়া বিবি। তাঁর গন্তব্য এখনো জানা যায়নি।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে নিম্ন আদালতে আসিয়া বিবিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালে আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে নিম্ন আদালত আসিয়া বিবিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ২০১৫ সালে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তিনি। পরে গত ৩১ অক্টোবর আসিয়া বিবিকে খালাস দেন সর্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট আসিয়াকে বেকসুর খালাস দেওয়ার পর আন্দোলনে ফেটে পড়ে পাকিস্তান। রায় ঘোষণার পর শত শত মানুষ রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদে রাস্তা অবরোধ করেন। এতে নেতৃত্ব দেয় উগ্র ডানপন্থী তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি)। প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেন সেনাপ্রধানের সঙ্গে। তারপর ইমরান খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। কিন্তু এরপরও সারা দেশে অবস্থান ধর্মঘট পালন করতে থাকে টিএলপি। অবশেষে সরকার টিএলপির সঙ্গে একটি চুক্তি করে। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, চুক্তির আওতায় আসিয়া বিবির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার বিনিময়ে বিক্ষোভ থামাতে সম্মত হয় টিএলপি। এরপর আন্দোলনকারীরা আটকে রাখা সড়কগুলো ছেড়ে দেয়। তবে গতকাল বুধবার সকালে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আফ্রিদি ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, দণ্ডিত হওয়া কিংবা বিচারিক নির্দেশ ছাড়া আসিয়া বিবির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাবে না। এর আগে সহিংস বিক্ষোভের মুখে নিরাপত্তা–শঙ্কায় পশ্চিমা দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন আসিয়া বিবির স্বামী।
নিরাপত্তা–হুমকির মুখে আসিয়াকে রাখা হয়েছিল মুলতানের নারী কারাগারে।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় ইথান ওয়ালি গ্রামের আসিয়া বিবিকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে একই পাত্রের পানি খাওয়া নিয়ে তর্কাতর্কির সময় তিনি ধর্ম অবমাননা করেন বলে দুই মুসলিম নারী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বিচারিক আদালতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়। চার বছর পর লাহোরের হাইকোর্ট সেই রায়কেই বহাল রেখেছিলেন। পরে আসিয়া বিবিকে খালাস দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার, আসিফ সাইদ খোসা ও মাজহার আলম খান মিয়ানখেল আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ম অবমাননার দায় থেকে তাঁকে রেহাই দেন। রায় ঘোষণার সময় পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার বলেন, মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ও দোষী সাব্যস্তকরণের বিরুদ্ধে আপিল গৃহীত হয়েছে।
১৯৯০ সাল থেকে পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অন্তত ৬৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে।