চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসায় চোখ হারানো ১৯ জনের প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ স্থগিত করেনি আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ক্ষতিপূরণ স্থগিত চেয়ে আইরিশ কোম্পানির পক্ষে করা আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
হাইকোর্টের ক্ষতিপূরণ আদেশের বিরুদ্ধে ওষুধ কোম্পানি আইরিশের স্থগিত আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি নুরুজ্জামানের চেম্বার জজ আদালত রোববার (১১ নভেম্বর) এই আদেশ দেন।
আদালতে আইরিশ কোম্পানির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী শ. ম. রেজাউল করিম। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত।
এর আগে চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে এসে চোখ হারানো ১৯ জনের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার ও আইরিশ কোম্পানিকে এই ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদাণের নির্দেশ দেয়া হয়।
এ সংক্রান্ত রুলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে গত ২১ অক্টোবর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
গত ২৯ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমুনিটি হেল্থ সেন্টারে তিনদিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। তবে বাসায় ফিরেই ২০ জন রোগীর চোখে ইনফেকশন দেখা দেয়। এসব রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ মার্চ অপারেশনের পর ৬ মার্চ তাদের প্রত্যেককেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। বাড়ি ফিরে ওই দিন বিকেলে, আবার কারও সন্ধ্যায় বা রাত থেকে চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা ও পানি ঝরতে শুরু করে। পরদিনই তারা যোগাযোগ করেন ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে। তাদের তখন গুরুত্ব না দিয়ে কোনো রকম চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে উঠলে ফের তারা ইম্প্যাক্টে যান। সেখান থেকে তখন কয়েকজন রোগীকে স্থানীয় এক চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
স্থানীয় ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞ তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। তাদের মধ্যে চার রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্ট থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ রোগীকে ঢাকায় নেয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে তাদের চোখের এত ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়।
পরে চোখ হারানো প্রত্যেকের পক্ষে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট চোখ হারানো ২০ জনকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, তা জানতে রুল জারি করা হয়। রুলের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট তাদের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।