‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অর্জন’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সকল বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরে একযোগে শুরু হয়েছে আয়কর মেলা-২০১৮। এবারে মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’।
আজ মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) সকালে ঢাকার বেইলী রোডে অফিসার্স ক্লাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আনুষ্ঠানিকভাবে আয়কর মেলার উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, কর প্রদানের সংস্কৃতি চালু হয়েছে। তার প্রমাণ এই আয়কর মেলা। আমাদের আরো বহুদূর যেতে হবে। গত ১০ বছরে বার্ষিক আয় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরো বাড়াতে হবে।
নবম বারের মতো আয়োজিত এবারের আয়কর মেলা সারা দেশে সর্বোচ্চ ১৭৩টি স্থানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৩ থেকে ১৯ নভেম্বর ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে ৭ দিন, জেলা শহরগুলোতে ৪ দিন এবং আর ৩২টি উপজেলায় ২ দিন এবং ৭০টি উপজেলায় ১ দিন ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলা হবে। উপজেলাগুলোতে প্রশাসনের সুবিধা অনুযায়ী আয়কর মেলা আয়োজন করবে।
আয়কর মেলার শুরুতেই করদাতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মেলা উদ্বোধনের আগেই করদাতা দীর্ঘ লাইনে রিটার্ন জমা দেওয়াসহ বিভিন্ন সেবা নেওয়া শুরু করেন।
আয়কর মেলা উপলক্ষে রেডিও, টেলিভিশন, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ এবং কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বিশেষ বাণী দিয়েছেন। কর প্রদানে উৎসাহ ও সচেতনা বৃদ্ধিতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। দেওয়া হবে করবিষয়ক এসএমএস।
আয়কর মেলাকে সাজানো হয়েছে চিরন্তনী মেলার সাজে। এতে বিদ্যমান করদাতা, সম্ভাব্য করদাতা ও ভবিষ্যতের করদাতাদের জন্য ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণে সহায়তা, রিটার্ন গ্রহণ, কর পরিশোধ, কর শিক্ষা ইত্যাদি নানা আয়োজন থাকছে।
করদাতা |
করমুক্ত আয়সীমা (টাকা) |
সাধারণ করদাতা |
২ লাখ ৫০ হাজার |
নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতা |
৩ লাখ |
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতা |
৪ লাখ |
গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতা |
৪ লাখ ২৫ হাজার |
কার জন্য কেমন কর
মোট আয় |
কর হার |
প্রথম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর |
শূন্য |
পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর |
১০ শতাংশ |
পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর |
১৫ শতাংশ |
পরবর্তী ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর |
২০ শতাংশ |
পরবর্তী ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর |
২৫ শতাংশ |
অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর |
৩০ শতাংশ |
আয়কর মেলায় ২০১৮-২০১৯ করবর্ষের রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য আলাদা বুথ, রেজিস্ট্রেশন বুথে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান সাপেক্ষে নতুন করদাতাগণ রেজিস্ট্রেশন ও বর্তমান (পুরাতন টিআইএনধারী) করদাতাগণ রি-রেজিস্ট্রেশন ও ই-পেমেন্টে অনলাইনে প্রদেয় আয়কর পরিশোধ করতে পারবেন। মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের জন্য রয়েছে পৃথক বুথ। থাকছে হেল্প ডেস্ক, তথ্যকেন্দ্র ও আয়কর অধিক্ষেত্র সংক্রান্ত বুথ। এসব বুথের মাধ্যমে করদাতাগণকে আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ, চালান ও পে-অর্ডার প্রস্তুতসহ আয়কর আইন বিষয়ক প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হবে। মেলায় স্থাপিত সোনালী ও জনতা ব্যাংকের বুথে করদাতাগণ আয়কর জমা দিতে পারবেন। মেলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীন শুল্ক, ভ্যাট, সঞ্চয় অধিদপ্তর, বিসিএস (কর) একাডেমি, কাস্টমস একাডেমি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের পৃথক বুথ রযেছে, যেখানে করদাতাগণ শুল্ক, ভ্যাট, সঞ্চয় অধিদপ্তর এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যেকোনো তথ্য জানতে পারবেন। করদাতাদের সুবিধার জন্য মেলা প্রাঙ্গণে থাকছে ফটোকপির ব্যবস্থা।
২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া আয়কর মেলার পরিধি এবং মেলার মাধ্যমে আয়কর বিভাগের সেবার পরিসর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৮ সালে দেশব্যাপী সর্বাধিক সংখ্যক ভেন্যুতে আয়কর মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। গত আট বছরে আয়কর মেলায় ৪৪ লাখ ৯৮ হাজার ১২৫ জন নাগরিক (ব্যবসায়ী, সরকারি ও বেসরকারি) সেবা পেয়েছেন। আর এ সেবার মাধ্যমে এনবিআরের ১০ হাজার ৫৩২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। এনবিআরের তথ্য মতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গত আট বছরে মেলায় ১১ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৪ জন মানুষ আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। মেলায় নতুন করে ২ লাখ ২৬ হাজার ৭১১ জন মানুষ ই-টিআইএন খুলেছেন।