কে হচ্ছেন বাংলাদেশের পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের আদালতপাড়ায় চলছে নানা গুঞ্জন। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের জন্য সরকার চিন্তাভাবনা করছে। এক্ষেত্রে কয়েকজনের নাম খুব জোরেশোরেই উচ্চারিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে আছেন- অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির ও সাবেক বিচারপতি মনসুরুল হক চৌধুরী।
এছাড়া আওয়ামী লীগপন্থী প্রভাবশালী এক আইনজীবীর নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদকও ছিলেন।
সংবিধানের ৬৪ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হইবার যোগ্য কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগদান করিবেন।’
বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন- এমন খবর সর্বত্র। তিনি যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাহলে নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। তাই, এ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জোর লবিং চালাচ্ছেন আইনজীবীরা।
সূত্রে জানা যায়, পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের জন্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির, সাবেক সম্পাদক এ এম আমিন উদ্দিন এবং সাবেক বিচারপতি মনসুরুল হক চৌধুরীর নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মনোনয়ন নিশ্চিত হলে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন। তাই আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, কে হচ্ছেন পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল?
সংবিধানের ৬৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন অ্যাটর্নি জেনারেল। সংবিধানের ৬৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হওয়ার যোগ্য কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দান করবেন। উপ-অনুচ্ছেদ ৪-এ বলা হয়েছে, তিনি রাষ্ট্রপতির সন্তোষ অনুযায়ী স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।’
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, তফসিল ঘোষণা এবং মনোনয়নপত্র কেনার পর বর্তমান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করলেই হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেবেন।
নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার ড. মোহাম্মদ ইয়াসীন খানও একই মন্তব্য করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল হলো একটি সাংবিধানিক পদ। অ্যাটর্নি জেনারেল সরকারকে সংবিধান, সাধারণ আইন, আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইনগত পরামর্শ দেন। সরকারের পক্ষে আদালতে উপস্থিত থাকেন।
দীর্ঘ মেয়াদে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম
২০০৯ সালে ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্বগ্রহণের এক সপ্তাহ পর অ্যাটর্নি জেনারেল পদে পরিবর্তন আসে। বিদায় নেন জরুরি অবস্থার সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া অ্যাটর্নি জেনারেল সালাহউদ্দিন আহমেদ। তার স্থলে ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি নিয়োগ পান সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম।
অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগের আগে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) এক মেয়াদের সভাপতি ছিলেন। ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল পদে পাঁচ বছর পূর্ণ হয় মাহবুবে আলমের। পরে আরও প্রায় পাঁচ বছর মিলিয়ে টানা প্রায় ১০ বছর অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার আগে এত দীর্ঘ মেয়াদের আর কোনো অ্যাটর্নি জেনারেল দেখা যায়নি বাংলাদেশে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট নেয়া হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১৯ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিন ২২ নভেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর। বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ভোটগ্রহণের এদিন ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চান মাহবুবে আলম
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মুন্সীগঞ্জ-২ আসন থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দলীয় মনোনয়ন পেলে অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে পদত্যাগ করবেন তিনি।
এ বিষয়ে মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের জনগণ তাদের প্রার্থী হিসেবে আমাকে দেখতে চায়। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছি। তাদের পাশে থেকেছি। এ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছি। আশা করছি আমি দলীয় মনোনয়ন পাবো।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, এ পদে থেকে নির্বাচন করতে আইনি বাধা নেই। তবে, আমি যদি মনোনয়ন পাই তাহলে যেকোনো ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে পদত্যাগ করবো। জাগো নিউজ