‘ঈশ্বরের আদেশে’ আট জন নারী ভক্তের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের দায়ে অভিযুক্ত এক ধর্ম প্রচারকের ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ভুক্তভোগীরা তার কাজকে ‘ঐশ্বরিক’ ভেবে কোনও বাধা দেয়নি। ধর্ষণের সময় ভুক্তভোগীদের প্রতি অভিযুক্তের বক্তব্যও সেরকমই ছিল। সে বলতো, ‘এটি ঈশ্বরের আদেশ।’
আজ বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত ধর্ষণের দায়ে দেশটির একজন প্রভাবশালী খ্রিস্ট ধর্মীয় প্রচারককে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, দণ্ডপ্রাপ্ত ধর্মপ্রচারক জায়েরক লি ভুক্তভোগীদের চেয়ে প্রায় ৫০ বছর বড়। তার নিজের বয়সই ৭৫ বছর।
‘ঈশ্বরের আদেশে’ ধর্ষণ করা লি আগে থেকেই বিতর্কিত। নিজেকে সব পাপের ঊর্ধ্বে থাকা মহামানব দাবি করার প্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে ‘ক্রিশ্চিয়ান কাউন্সিল অব কোরিয়া’ তাকে বহিষ্কার করে। নিজেকে ‘অমর’ দাবি করার প্রেক্ষিতে ‘কোরিয়ান মিনিস্ট্রিয়াল এসোসিয়েশন’ তাকে ‘কাল্ট লিডার’ আখ্যা দেয়। লি মানমিন সেন্ট্রাল চার্চের প্রধান। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে তাদের অনুসারীর সংখ্যা এক লাখ ৩৩ হাজার জন এবং বিশ্বজুড়ে তাদের ১০ হাজার শাখা ও সহযোগী গির্জা রয়েছে।
১৫ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত বলেছে, ‘ভুক্তভোগীরা ছেলেবেলা থেকে সংশ্লিষ্ট চার্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাদের বিশ্বাস ছিল, লি একজন ঈশ্বরতুল্য ব্যক্তি যে তাদেরকে স্বর্গে নিয়ে যাবে। পরিস্থিতিদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভুক্তভোগীরা লির বিরুদ্ধে কোনও প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিষয়ে মানসিকভাবে শক্তিহীন হয়ে পড়েছিলেন। আর লি তাদের ভক্তির সুযোগে অপরাধ সংগঠিত করেছে।’
আদালত আরও বলেছে, ‘ভুক্তভোগীরা তাকে এমন এক স্বর্গীয় পুরুষ বলে ধরে নিয়েছিল, যার ঐশ্বরিক ক্ষমতা রয়েছে। তারা জায়েরক লির আচরণকে যৌনকর্মের বদলে ধর্মীয় কাজ হিসেবে গণ্য করেছে। ফলে এ বিষয়ে লির বিরুদ্ধে তারা কোনও প্রশ্ন তোলেনি। তারা ভেবেছিল, প্রশ্ন করলে তাদের পাপ হবে।’
ধর্মপুরুষ লি যে তার নারী ভক্তদের সঙ্গে যৌনকর্ম করে থাকেন তা নিয়ে আলোচনা আছে প্রায় দুই দশক ধরে। লির বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করায় ১৯৯৯ সালে তার প্রায় ৩০০ দক্ষিণ কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেলের অফিসে ভাঙচুর চালায়। লির যৌন জীবনের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রের প্রচার ঠেকাতে মুনোয়া ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার রায় পেতে সমর্থ হয়েছিল জায়েরক লির আইনজীবীরা। এবার অবশ্য তার ১৫ বছরের কারাদণ্ডের রায় হয়েছে।
লি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ধর্ম প্রচার করেছে। তার ওয়েবসাইটের দাবি মতে, বিশ্বের নানান যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের লি সুস্থ করে তুলেছে। আর এ কাজে তাকে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতের মাথায় হাত রাখতে হয়নি। বরং চার্চের বসেই সে এমন অলৌকিক কাজ সম্পন্ন করেছে। ওয়েবসাইটে ক্যান্সার ও এইডসের মতো রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও তার সাফল্যের দাবি করা হয়েছে।