মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (এসএসসি) অংশ নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ ফরম পূরণের সময় নেওয়া অতিরিক্ত ২৫ লাখ টাকা ফেরত দেবে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ এ অর্থ ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করে।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) স্কুলটিতে অভিযান চালানো হয়। পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নিয়ে তা শিক্ষকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে রাখা হচ্ছে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের অর্থের বিনিময়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে —দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে (হটলাইন-১০৬) এমন অভিযোগ পেয়ে স্কুলটিতে অভিযান চালায় দুদক। সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে উপসহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম ও পুলিশসহ ছয় সদস্যের একটি দল অভিযানে অংশ নেয়।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষায় যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলের পরীক্ষার্থী ৬৩৭ জন। এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত নেওয়ার প্রমাণ পায় দুদকের দলটি। অতিরিক্ত আদায় করা এ অর্থ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান হাওলাদার এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগম ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসরীন নাহারের যৌথ নামে আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক যাত্রাবাড়ী শাখায় জমা রাখা হয়।
দুদক দলের অভিযানের মুখে স্কুল কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে আদায় করা ২৫ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার লিখিত অঙ্গীকার করে। ২৫ ও ২৬ নভেম্বর দুদক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কাছে এ অর্থ ফেরত দেওয়া হবে বলে অঙ্গীকার করা হয়।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুদকের অভিযানের কারণে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ বন্ধ হয়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ ফেরত প্রদানে অঙ্গীকার করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে দুদক শুধু অভিযানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে বিষয়টি সরকারকে অবহিত করেছে। আমার জানামতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও দুদকের অনুরোধে পদক্ষেপ নিয়েছে।’
সরকারের তদারকি দল
ঢাকা মহানগর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে বাড়তি টাকা আদায় বন্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং বাড়তি টাকা নিলে তা ফেরতের ব্যবস্থা করতে ১১টি তদারকি দল গঠন করেছে সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে গত সোমবার এসব দল গঠন করে। দলে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও রাখা হয়েছে। তদারকি দলগুলো এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণকারী শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নেবে। এরপর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফরম পূরণে শিক্ষার্থীরা কী পরিমাণ টাকা দিয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে।
নির্ধারিত ফির বাইরে বিভিন্ন নামে ও খাতে বাড়তি টাকা আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা এবং বাড়তি টাকা আদায় করে থাকলে সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করবে এসব তদারকি দল। তদারকি এই কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন মাউশিতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ ফি মোট ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখায় জনপ্রতি ১ হাজার ৬৮০ টাকা। কিন্তু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি টাকা আদায় করছে। এতে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক শৃঙ্খলাও বিঘ্নিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাউশিকে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।