জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম-এর ব্যবহার সংবিধান সম্মত বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘সংবিধানে যেটা লেখা আছে, তার আওতায় থেকেই নির্বাচনে ইভিএম করা হচ্ছে।’
আজ রোববার (২৫ নভরম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে জেলা জজ, দায়রা জজ এবং মেট্রোপলিটন দায়রা জজদের ২৪তম বিচার প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
কয়েকটি আসনে ইভিএম-এর ব্যবহার করে নির্বাচন করা নিয়ে বিএনপির আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একটি জিনিস বুঝলাম না, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান (ড. কামাল হোসেন) ওনাদের (বিএনপি) নেতা হিসেবে আছেন। তারপরও ওনারা কীভাবে এসব বক্তব্য দেন? একটা সময় কম্পিউটারে বা ইন্টারনেটে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার কোনও নিয়ম ছিলো না। কারণ, যখন সংবিধান রচনা করা হয়েছিল, তখন এসব প্রযুক্তি ছিল না। আর সংবিধানে সব কথা লেখা থাকে না। সংবিধানে যেটা লেখা আছে, তার আওতায় থেকেই কিন্তু এই ব্যবস্থা (ইভিএম) করা হচ্ছে। কাজেই এটা বলা যায়, এই ইভিএম ব্যবহার সংবিধান সম্মত।’
তবে নাইকো দুর্নীতি নিয়ে কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ ও যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই-এর তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘মামলাটি বিচারাধীন। এটি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। মন্তব্য করলে মামলায় প্রভাব পড়তে পারে। কখনও আমি বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করি না।’
এর আগে বিচার প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনকালে আনিসুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার। এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন নির্ভর করছে আপনাদের (উপস্থিত বিচারক) ওপর।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে যে কাজটি প্রথমে শুরু করা দরকার, সেই কাজটি আগে করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান তৈরি করেন। সে সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের মোট ১৮ জন সদস্যকে হত্যার মধ্যদিয়ে দেশে বিচারহীনতার ছায়া নেমে এসেছিল। এরপর জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করে তাদের মামলার অভিযোগপত্র দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়েছিল।’
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত বিচারকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুরু হওয়া বিচারহীনতা থেকে বেরিয়ে এসে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় বিচারাঙ্গনের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেন। এরপর দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ রেখে এর স্বাধীনতা নিশ্চিত ও তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসে বিচারকদের বেতন-ভাতা, মর্যাদা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘বছরখানেক আগেও শোনা গেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের বিরোধ রয়েছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, ক্ষমতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আমাদের (আইন মন্ত্রণালয়) কোনও টানাপড়েন কখনও ছিলো না। তবে একজন প্রধান বিচারপতি (এস কে সিনহা) ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তা করতে তিনি সফল হতে পারেননি। তাই আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আমাদের কোনও দ্বন্দ্ব নেই।’
নিম্ন আদালতের জজদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাবেক বিচারপতি খন্দকার মুসা খালেদ।