বিচারিক আদালতে দুই বছরের বেশি দণ্ড ও সাজা হলে সাজা মাথায় নিয়ে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে আদালত অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট। শুধুমাত্র আপিল বিভাগ কর্তৃক সাজা স্থগিত হলেই তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
আজ মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ অভিমত দেন।
বিএনপির পাঁচ নেতার দুর্নীতির পৃথক মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে করা পৃথক আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট এ পর্যবেক্ষন দিয়েছেন। আবেদনকারী পাঁচ নেতা হলেন আমান উল্লাহ আমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. মসিউর রহমান ও মো. আবদুল ওহাব।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, নিম্ন আদালতে দুর্নীতির দায়ে দুই বছর বা এর অধিক সাজাপ্রাপ্তদের আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
হাইকোর্টের এই আদেশের ফলে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ যেসব রাজনীতিকরা দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের নির্বাচনে অংশ সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
আদেশের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, দুই বছরের বেশি সাজা হলে সাজা মাথায় নিয়ে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলে আদালত অভিমত দিয়েছেন। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল বিচারাধীন, আবেদনকারী জামিনে আছেন, জরিমানার আদেশ স্থগিত হয়েছে—এসব দণ্ড বা সাজা স্থগিতের যুক্তি হতে পারে না বলেছেন আদালত। সংবিধান সর্বোচ্চ আইন। দণ্ডিত সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচন করার বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে বাধা আছে।
বিএনপি নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেনের আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা অনুসারে দণ্ড স্থগিতের সুযোগ নেই বলেছেন আদালত। দণ্ড ও সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আদালতে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির করা আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ওই ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, বলেছেন আদালত।
আদালতে আমান উল্লাহ আমানের পক্ষে আইনজীবী জাহিদুল ইসলাম, জাহিদের পক্ষে রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আহসানুল করিম ও খায়রুল আলম চৌধুরী, ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও আবদুল ওহাবের পক্ষে ছিলেন রফিক-উল হক ও ফখরুল ইসলাম। মসিউর রহমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমিনুল হক ও মাহবুব শফিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
এর আগে, গতকাল সোমবার অপর এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুসারে দণ্ড (কনভিকশন) স্থগিতের সুযোগ নেই বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত এক আবেদন খারিজ করে এই পর্যবেক্ষণ দেন।
এক মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড, সাজা ও জরিমানা স্থগিত চেয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলাম ওই আবেদনটি করেছিলেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা পর্যালোচনা দেখা যায়, এখানে দণ্ড স্থগিতের সুযোগ নেই। আদালত বলেছেন, দণ্ড হচ্ছে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, যেখানে একজন বিচারক কাউকে কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে সিদ্ধান্ত দেন, সেখানে দোষী হলে শাস্তি হিসেবে সাজা দেওয়া হয়। দণ্ড (কনভিকশন) ও সাজা দুটি ভিন্ন বিষয়। যেহেতু আবেদনকারী (ফখরুল ইসলাম) জামিনে আছেন, তাই সাজা স্থগিতের প্রশ্ন আদৌ নেই। ওই আবেদনটি ভ্রান্ত ধারণা প্রসূত অভিহিত করে হাইকোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছেন। তবে ফখরুল ইসলামের জরিমানা স্থগিত করেছেন আদালত।
এ প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত ও সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্য দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না এই প্রসঙ্গ এখন আলোচনায়। এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, হাইকোর্টের এই আদেশে অন্য দণ্ডিত ও সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ফলে খালেদা জিয়াসহ অন্য দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে না।