বিনা অপরাধে ভারতের কারাগারে প্রায় ১০ বছর বন্দি থাকার পর অবশেষে দেশে ফিরিয়ে আনা বাদল ফরাজিকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি তা নিশ্চিতে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এই রিটটি করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটির ওপর শুনানি হতে পারে।
আসকের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান রিটের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে জানান, বাদল ফরাজিকে যে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি, সেই বিষয়টি নিশ্চিত হতে কারণ দর্শানোর আরজি জানিয়ে রিটটি করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৮ জুলাই তাকে মুক্তি দিতে একটি রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী। যেটি একই বছরের ১১ জুলাই উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, বাদল ফরাজি প্রায় ১১ বছর আগে ভারতে বেড়াতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁকে বাদল সিং ভেবে একটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত করে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারের চেষ্টার পর গত বছরের জুলাইয়ে ভারত তাঁকে দেশে ফেরত পাঠালেও তিনি মুক্তি পাননি। ভারতের আদালতে দণ্ডিত হওয়ায় তিনি কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।
কারাগারে থাকা বাদল ফরাজি জানান, তিনি নির্দোষ বলেই বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় দিল্লির তিহার জেল থেকে তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। তাঁকে জানানো হয়েছিল, যত দ্রুত সম্ভব মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু দেশে ফেরার সাত মাস হলেও মুক্তির কোনো লক্ষণ দেখছেন না। দাগি আসামিদের সঙ্গেই দিন পার করছেন তিনি।
বাদল ফরাজি প্রায় ১১ বছর আগে শখের বশে তাজমহল দেখতে পর্যটক ভিসায় ভারতে যাচ্ছিলেন। বেনাপোল সীমান্ত পার হতেই বিএসএফ তাঁকে ‘বাদল সিং’ হিসেবে গ্রেপ্তার করে। বাদল সিং দিল্লির অমর কলোনির এক বৃদ্ধা খুনের মামলার আসামি। ওই সময় তিনি ইংরেজি বা হিন্দি বলতে না পারায় বিএসএফকে সঠিক বিষয়টি বোঝাতে পারেননি। এ কারণে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারেই তিনি মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পাস করেন। একপর্যায়ে কারাগারে ইংরেজির শিক্ষকতা শুরু করেন। সহবন্দীদের ইংরেজি শেখাতেন। স্নাতকের পর আটটি ডিপ্লোমা কোর্সও করেন। বাগেরহাটের ছেলে বাদল গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ১৮ বছর বয়সে, এখন তাঁর বয়স ২৯।
২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদল ফরাজিকে দিল্লির সাকেত আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে আপিল করা হলেও নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকে। রায়ের পর থেকে তিহার কারাগারের ৩ নম্বর সেলে জীবন কেটেছে তাঁর। এখানে বন্দীদের কাউন্সেলিং করতে আসা মানবাধিকারকর্মী রাহুল কাপুরের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। সব শুনে তাঁকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন রাহুল। ‘জাস্টিস ফর বাদল’ শীর্ষক একটি আবেদনে স্বাক্ষর অভিযানও শুরু করেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাদলের দণ্ডের বিরুদ্ধে জোর আওয়াজ তোলেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ ভারতের বিভিন্ন পত্রিকা এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। রাহুল বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করলে হাইকমিশন সরকারের কাছে চিঠি পাঠায়। এরপরই বাদলকে ছাড়াতে দুই দেশের মধ্যে চিঠি চালাচালি শুরু হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সভার প্রস্তাবে বাদলকে ‘নির্দোষ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।