কয়েকদিন আগে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে এক প্রকার ধমকই দিয়েছিলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এবার কোর্টের ধমকের মুখে পড়েছে দেশটির বেসরকারি স্কুলগুলো। বেসরকারি স্কুলগুলোর মালিকদেরকে তারা চক্ষুলজ্জাহীন বলেও তিরস্কার করেন।
দেশের বেসরকারি স্কুলগুলোর অত্যধিক মাত্রায় ফি বৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। এতটাই যে, এই সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের এক বেঞ্চ দেশের সব বেসরকারি স্কুলকে সরকারি করে দেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে আদালত বলেছেন, ‘আমাদের উচিত এখনই আপনাদের এসব স্কুল বন্ধ করে স্কুলের প্রশাসনিক সমস্ত দায়িত্ব সরকারের হাতে তুলে দেয়া।’
একই সঙ্গে পাক সর্বোচ্চ আদালত মন্তব্য করেন, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনোই টাকা কামানোর কারখানা হতে পারে না।
বেসরকারি স্কুলগুলোয় অত্যধিক ফি-বৃদ্ধি নিয়ে পুরো পাকিস্তান জুড়েই চলছে ক্ষোভ। গত ডিসেম্বরের ১৩ তারিখে এই ফি-বৃদ্ধি কমাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। তারা নির্দেশ দিয়েছিলেন, বর্ধিত ফি-এর অন্তত বিশ শতাংশ কমাতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। যে সব বেসরকারি স্কুলের বেতন পাঁচ হাজার টাকার বেশি, তাদের জন্যই এই নির্দেশ প্রযোজ্য ছিল।
সেই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন, কোনো বেসরকারি স্কুলই ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন বছরে ৮ শতাংশের বেশি বাড়াতে পারবে না। গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময়ে যে স্কুল ফি নেয়া হয়, তার অর্ধেক ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের ফিরিয়ে দেয়ারও নির্দেশ দেন কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতে বিচারপতিদের চিঠি পাঠায় ইসলামাবাদের দু’টি বেসরকারি স্কুল। সেই নিয়েই সোমবার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। ওই চিঠির ভাষা আদালতের পক্ষে ‘অবজ্ঞাসূচক’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি গুলজার আহমেদ, বিচারপতি ফয়সল আরবাব এবং বিচারপতি ইজাজুুল আহসানের বেঞ্চ।
বিচারপতিরা বলেছেন, ‘আপনাদের এত সাহস হয় কী করে? আদালতের নির্দেশকে কঠোর বলে বিচারপতিদের চিঠি পাঠান!’ এর পরে তারা বলেন, ‘আপনাদের চোখে তো লজ্জার চিহ্নমাত্রও নেই! এখনই আপনাদের স্কুল বন্ধ করে সরকারের হাতে তুলে দেয়া উচিত।’
আদালতের এ তিরস্কারের প্রেক্ষিতে ওই দুই বেসরকারি স্কুলের আইনজীবী বলেন, আদালত অবমাননার কোনো উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। তারা কেবল এতটুকুই বলেছেন, ‘যা লেখা হয়েছে, তার জন্য আমরা ক্ষমা চাইছি। ভবিষ্যতে এমনটা আর হবে না।’
এর জবাবে বিচারক গুলজার বলেন, লিখিত আকারে ক্ষমা চাওয়ার এ বিষয়টি উপস্থাপন করতে হবে। আমরা স্কুলে গিয়ে অডিট চালিয়ে এর বৈধ-অবৈধ টাকার হিসাব বের করব। কারণ স্কুল এখন পুরোপুরি ব্যবসা হয়ে গেছে। অথচ এ প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই টাকা বানানোর একটি কারখানা হিসেবে গণ্য হতে পারে না।
পরবর্তী সময়ে আদালত দুই সপ্তাহের জন্য এ শুনানি মুলতবি ঘোষণা করেন। সূত্র : দ্য নিউজ, ট্রিবিউন