সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতো একই স্কেলে বেসরকারি সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সমান বেতন-ভাতা প্রদান করার দাবিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
কোচিং বাণিজ্য বন্ধে হাইকোর্টের রায়ের পর জনস্বার্থে শিক্ষকদের পক্ষে বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এমন নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা ভবনের মহাপরিচালক (ডিজি) ও জেলা প্রশাসককে (ঢাকা) ডাক রেজিস্ট্রি যোগে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশ অনুযায়ী আগামী সাতদিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হবে। কোচিং বাণিজ্য বন্ধের বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আবেদনে করলে আমরাও আপিলের পক্ষভুক্ত হয়ে আপিল আবেদন করবো।
নোটিশের বিষয়ে আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় শিক্ষকদের ‘কোচিং বাণিজ্য লাগাম’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ আমার দৃষ্টি গোচর হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কোচিং নিয়ে হাইকোর্টের রায়টি পর্যালোচনা করলাম। রায়টি ছিল ‘কোচিং বন্ধে সরকারের নীতিমালা ঘোষণা সংক্রান্ত-২০১২ সালের’।
রায় অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং করানো বন্ধ করতে হবে। কিন্তু একজন সরকারি স্কুল কলেজেরে শিক্ষকরা যে হারে উচ্চ বেতন ভাতা পায়, সেখানে একজন বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকরা কিন্তু তা পায় না। তাই সরকারি স্কুল কলেজ মাদরাসার শিক্ষকদের জীবন যাপনে বে-সরকারি স্কুল কলেজ মাদরাসার শিক্ষকদের ব্যাপক তফাৎ। ব্যক্তিগতভাবে একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে আমিও কোচিং এর বিরুদ্ধে। কিন্তু সেটা শুধু মাত্র সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (শিক্ষক /শিক্ষিকার) জন্য। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (শিক্ষক /শিক্ষিকার) জন্য তখনই প্রযোজ্য হবে যখন সম্পূর্ণরূপে সরকারি স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা প্রদান করা হবে।
তাই সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতার বৈষম্য দূর করে সমান বেতন ভাতা করার দাবিতে শিক্ষার্থীর অভিবাবক ও বিক্ষুব্ধ ব্যাক্তি হিসেবে জনস্বার্থে এই নোটিশ পাঠানো হলো।
প্রসঙ্গত, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যে বন্ধে ২০১২ সালে প্রণীত সরকারের নীতিমালাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য করতে পারবেন না বলেও রায় দিয়েছেন আদালত।
এ রায়ের ফলে সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ কার্যকর হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।
এর ফলে, কোনো শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার সুযোগও থাকবে না কোনো শিক্ষকের। তারা কোচিং সেন্টারের মালিক হতেও পারবেন না।
কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাজধানীর মতিঝিল সরকারি বালক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না সেজন্য কারণ দর্শাতে নোটিশ দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ওইসব নোটিশ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২ নিয়ে ওই শিক্ষকেরা হাইকোর্ট রিট করেন। তখন হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন।
জারি করা ওই রুলের ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, কোচিং বাণিজ্য অনুসন্ধান এবং তদন্ত করার এখতিয়ার দুদকের আছে। তবে, দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি অগ্রাধিকার তালিকা থাকতে হবে, কোন বিষয়ে কমিশন তদন্ত বা অনুসন্ধান করবে। গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে কোচিং ব্যবসার সঙ্গে শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখতে দুদকের অনুসন্ধান এখতিয়ার বহির্ভূত বলে মনে করে হাইকোর্ট।