চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাইকোর্টে পাঁচটি রিট আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদনে নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউন ও কারখানা সরানো, বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুদ করা গ্যাস সিলিন্ডার অপসারণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
ওই সকল রিট আবেদনে নিমতলী ট্রাজেডির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে হাইকোর্টে এসব আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), ব্রাকসহ কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে নিমতলীর ট্রাজেডির ঘটনায় তদন্ত কমিটির করা ১৭ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন চাওয়া হয়েছে। এজন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে। একইসঙ্গে, চকবাজারের চুড়িহাট্টায় হতাহতের ঘটনায় পুরান ঢাকায় আর যেন রাসায়নিক ব্যবসার অনুমোদন দেয়া না হয় তার ওপর নিষেধাজ্ঞাও চাওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এসব রিট আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে। নিমতলীর ঘটনায় ২০১০ সালে করা রিট আবেদনের সম্পূরক আবেদন হিসেবে রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এই আবেদন দাখিল করা হয়।
এ ছাড়া নিমতলীর ট্র্যাজেডির ঘটনায় তদন্ত কমিটির করা ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নুর মোহাম্মদ আলী ও খন্দকার মো. সায়েদুল কাউছার এবং সাগুফতা তাবাসুসম পৃথক দুটি রিট আবেদন করেছেন।
আজ হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এবং হাইকোটের্র বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিট দুটির ওপর শুনানি হতে পারে।
কেমিক্যালের গোডাউন ও কারখানা এবং ব্যবসার উদ্দেশ্যে মজুদ করা গ্যাস সিলিন্ডার অপসারণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তার কারণ দর্শাতে রুল জারির আরজি জানিয়ে বংশালের বাসিন্দা মো. জাবেদ মিয়া একটি রিট আবেদন করেছেন। এই রিটের ওপরও আজ হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।
চকবাজারের চড়িহাট্টায় হতাহতের প্রত্যেকের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে আরেকটি রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ। সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এই রিট আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাররের জন্য ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি রিটে ক্ষতিপূরণ ছাড়া তদন্তের জন্য বিচারিক কমিশন গঠন, অবৈধ বিল্ডিং ভাঙা এবং কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দস কাজল বলেন, ‘আইনজীবী নুর মোহম্মদ আজমিসহ দুজন আইনজীবীর পক্ষে তিনি রিট দায়ের করেছেন। রিটে এ ধরনের দুর্ঘটনারোধে কেন আইন প্রয়োগ করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারে রাতের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান ৬৭ জন। আহত হন আরও অনেক। এখানকার নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানশন ঘিরে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। আবাসিক ভবনটিতে কেমিক্যাল গোডাউন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে যে নয়জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ হতাহতের ঘটনায় ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজার থানায় একটি মামলা হয়। চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।