যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ কাজে দুর্নীতি অভিযোগে ১০ বছর আগের এক মামলায় বিএনপি আমলের মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল দশটা থেকে দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম তাঁকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
এর আগে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে নাজমুল হুদাকে তলব করা হয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ১৮ জুন রাজধানীর মতিঝিল থানায় নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, যমুনা সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্গানেট ওয়ান লিমিটেডকে নিযুক্ত করা হয়। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা তাঁর স্ত্রীর মালিকানায় পরিচালিত ‘খবরের অন্তরালে’ পত্রিকার হিসাবে জমা দেওয়ার জন্য বলেন। মাসিক কিস্তিতে দাবিকৃত টাকা না দেওয়া হলে ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি নিয়োগ বাতিল করে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি দেন।
অবশেষে নিরুপায় হয়ে ব্যাপক ব্যবসায়িক ক্ষতি বিবেচনা করে মাসে ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ প্রদানের প্রস্তাব করলে নাজমুল হুদা দম্পতি তাতে রাজি হন। এরপর তাঁরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্গানেট ওয়ান লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকের কাছ থেকে ২০০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চেকের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকা ঘুষ নেন। মামলাটির কার্যক্রম ২০১৬ সালে হাইকোর্ট বাতিল করলেও ২০১৭ সালের ৭ মার্চ দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বাতিল করেন আপিল বিভাগ।
দুদকের তলব প্রসঙ্গে নাজমুল হুদার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সব দিক বিচার বিশ্লেষণ করে হাইকোর্ট মামলাটি বাতিল করে দিলেও আপিল বিভাগ কোনো বিশ্লেষণ ছাড়াই দুদকের আপিল মঞ্জুর করে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে আমি যে মামলা করেছি, সেখানে বিষয়টি বিশদভাবে তুলে ধরেছি।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ অক্টোবর সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন নাজমুল হুদা। মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা আমাকে তার খাসকামরায় ডেকে মোট সোয়া তিন কোটি টাকা ঘুষ চান। তবে আমি তাঁকে ওই ঘুষের টাকা দিইনি। কয়েকটি মামলা থেকে রেহাই এবং ব্যাংক থেকে টাকা অবমুক্ত করে দেওয়ার আদেশ দেওয়ার বিনিময়ে তিনি ওই টাকা দাবি করেছিলেন।’
নাজমুল হুদা বলেন, ‘এস কে সিনহা ঘুষ আদায়ের জন্য আমার বিরুদ্ধে খারিজ হওয়া একটি মামলা পুনরুজ্জীবিত করেন। আর সেই মামলাসহ আরও একটি মামলা থেকে রেহাই দিতে দুই কোটি টাকা আর ব্যাংকে আটকে যাওয়া টাকা অবমুক্ত করে দেওয়ার জন্য সেই টাকার অর্ধেক দাবি করেন। তাতে আসে সোয়া কোটি টাকা। আমি তাকে কোনো টাকা দিইনি। এটা ছিল ঘুষ নেওয়ার প্রচেষ্টা।’ মামলাটির তদন্ত করছে দুদক।