রাম চন্দ্র দাশ :
আমরা জানি যে, আইনপেশা পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীনও সম্মানের পেশা,যার কারণে আইনজীবীদের আগে ‘বিজ্ঞ’ বিশেষণটি ব্যবহার করা হয়। আমরা এটাও জানি যে, কমন ল’ লিগ্যাল সিস্টেম অনুসরণকারী কোন দেশেই আইন পেশায় অন্তর্ভূক্তির কোন সর্বোচ্চ বয়সসীমা নেই। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে, কিছু প্রপাগান্ডাও আছে; The Legal Practitioners and Bar Council Order, 1972 ( in short ‘the Order’) আইনে সর্বোচ্চ বয়সসীমার কোন বিধান না থাকার বিষয়টি স্পষ্ট থাকায় তা নির্ধারণ করার সুযোগ বর্তমান আইনী কাঠামোতে নেই বা এ জাতীয় আইন তৈরি করাও ঠিক হবেনা বলেও সংশ্লিষ্ট বিশেজ্ঞরা মনে করেন। আর তাই,’চল্লিশউর্ধ্বদের বেনেভলেন্ট ফান্ড (আনুপাতিক হারে প্রদান) থেকে বঞ্চিত করা কতটা আইনসম্মত?’ প্রশ্নটি উঠেছে-যা এই প্রবন্ধে আমি একটু তলিয়ে দেখার চেষ্টা করছি –
প্রথমত: বেনেভলেন্ট ফান্ডের আইনি বিধানগুলো দেখে নেওয়া দরকার। মূল আইনের (The Order) ১৪তে এই ফান্ডের কথা উল্লেখ আছে এভাবে(১) The Bar Council may constitute, for the benefit of the advocates and their families and dependents, group insurance schemes and Benevolent Funds.”
দ্বিতীয়ত: একই আইনের অনুচ্ছেদ ২৭ এর ক্লজ (১) এ অ্যাডভোকেট হওয়ার শর্তসমূহে ২১ বছরপূর্ণ হওয়ার বিষয় আছে এভাবে-
“(1) Subject to provisions of this order and the rules made thereunder, a person shall be qualified to be admitted as an advocate if he fulfills the following conditions namely:-
—- (b) he has completed the age of twenty-one years; ”
অর্থাৎ একুশ বছর বয়স্ক একজন ব্যক্তি অন্যান্য নির্ধারিত শর্তপূরণ সাপেক্ষে অ্যাডভোকেট হওয়ার পর তাদের জন্য বার কাউন্সিল এই ফান্ড গঠন করতে পারে।
তৃতীয়ত: ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বেনেভলেন্ট ফান্ড রুলস (বিধি)’ তে বেনেভলেন্ট ফান্ড এর বিধান সমূহ বিবৃত আছে। এরজন্য প্রাসঙ্গিক বিধান রুল ৬, এতে উল্লেখ আছে এভাবে- “Rule 6. Every person on his enrollment as an Advocate shall have to pay the contribution to the Benevolent Fund and therefore he shall have to pay his annual contribution according to Rule 4 through the Secretary of his/her Bar Association or directly.
Provided that persons who may be enrolled as Advocate after completion of the age of 40 years shall not be allowed to join the Benevolent Fund scheme of the Bangladesh Bar Council. This proviso will take effect from 18.6.87.”
এই বিধির প্রভিসিও-তে দেখা যাচ্ছে ১৮.০৬.৮৭ তারিখ থেকে চল্লিশ উর্ধ্বদের জন্য ভেনেবলেন্ট ফান্ড বাতিল করা হয়েছে।
চতুর্থত: আমরা জানি আমাদের পবিত্র সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদে পেশা বা বৃত্তি নির্বাচন সংক্রান্ত মৌলিক অধিকার এ বলা হয়েছে এভাবে- আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে কোন পেশা বা বৃত্তি-গ্রহণের কিংবা কারবার বা ব্যবসায় ”
অর্থাৎ আইননি বিধি-বিধান সাপেক্ষে পেশা-কারবার নির্বাচন আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এছাড়া পবিত্র সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদে ‘আইনের দৃষ্টিতে সমতা’ ও ‘কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভের’ মৌলিক অধিকার যথাক্রমে বিবৃত করা আছে।
পঞ্চমত: এখন প্রশ্ন হচ্ছে মূল আইনে অ্যাডভোকেটদের জন্য যে ফান্ডের ব্যবস্থা আছে’ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বেনেভলেন্ট ফান্ড রুলস (বিধি)’র মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বয়সের কারো প্রতি বৈষম্য করে তা বাতিল করা যায় কিনা? এর উত্তর পেতে হলে মূল আইনের বিরোধী কোন বিধি তৈরি ক্ষমতা(delegated power) কোন কর্তৃপক্ষের আছে কি-না তা পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে।
ষষ্ঠত: মূল আইন বিরোধী( Contrary to the parent Act/ Statute) কোন বিধি (Rule/Regulation)’ or‘delegated legislation কোন প্রতিষ্ঠান(delegate) (এমন কি সরকারের অনুমতি নিয়েও) করতে পারে কিনা, এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক উচ্চ আদালতের নজির (Precedent or Ratio-decidenti) পর্যালোচনা করা প্রয়োজন, যেমন- “(1) The delegated legislation, like the delegating statute, will void if it is contrary to any provision of the constitution ( AIR 1981 SC 1829), (2) No rule or law made by the delegate can supersede oroverride the powers exercised or the law made by the delegator of power (2000, 4 SCC 640); (3) The delegate while making the subordinate legislation can neighter restrict nor widen the scope of the delegating statute or its policy (AIR 1997 SC 2502), (4) nor can go beyond the policy laid down by the delegating statute so as to alter or amend the law (AIR 1966 828); (5)Regulaiton framed under an Act or Ordinence are of great importance. Such regulations are framed for the successful operation of the parent law. Without proper regulations a statutue will often worse than useless [70 DLR (AD) 16].”
উপরোক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় যে, সংবিধান বিরোধী ও মূলআইন বিরোধী কোন বিধি কোন প্রতিষ্ঠান তৈরি করলে তা আইন সম্মত হবেনা। তবে এটা বিচারের ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বা বিচার বিভাগের। সবশেষে আরেকটি বিষয় হল, আমার জানা মতে বেনেভলেন্ট ফান্ড গঠনের প্রধানতম উৎসগুলো হল সদস্যদের অনুদান, সরকারী অনুদান ও আইনজীবী সমিতির বিভিন্ন (ওকালতনামাসহ) আয়; তাছাড়া এই ফান্ডতো আনুপাতিকহারেই প্রদান করা হয়, অর্থাৎ যারা বেশিদিন প্রকটিস করবেন, তারা বেশি পাবেন। যদি তাই হয়, ৪০ উর্ধ্ব যোগদানকারী সদস্যরা কেন এই ফান্ড থেকে বঞ্চিত হবে, এর নৈতিকভিত্তিই বা কি হতে পারে? এই নিয়ম কি এক ধরনের বৈষম্য নয়? আমাদের বিজ্ঞ আইন পেশায় এই ধরনের বৈষম্য কতটুকু গ্রহনযোগ্য- তা আমাদের বিজ্ঞ কর্তৃপক্ষ ও সিনিয়ররা ভেবে দেখবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
লেখক : অ্যাডভোকেট, ঢাকা জজ কোর্ট; Email: ram.chandra.das@gmail.com