আইমান রহমান খান:
এশিয়ার বৃহত্তম বার এসোসিয়েশন ও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনজিবীদের প্রাণকেন্দ্র, ঢাকা জজ কোর্ট। পুরান ঢাকার ব্যস্ততম এলাকায় গড়ে উঠা এই আদালতপাড়ায় রয়েছে ৮টি ভবন, যা মূলত নিম্ন আদালতের স্তর অনুযায়ী সাজানো। এই আদালত প্রাঙ্গণটি অবস্থিত সদরঘাটগামী প্রধান সড়কের বিপরীতে এবং সড়কটির দুটি শাখা চলে গেছে আদালত ভবনগুলোর ঠিক মাঝখান দিয়ে। তাই মূল রাস্তায় জ্যাম থাকলে বিকল্প পথ হিসেবে অনেকেই এই গলি ব্যবহার করে থাকেন। ফলে আদালতের অভ্যন্তরীণ পথটিতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত হতে সি.এম.এম আদালত পর্যন্ত বিস্তৃত এই গলি আইনজীবীদের কাছে একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারন এই রাস্তা ধরে একজন আইনজীবী মহানগর দায়রা আদালত থেকে যেকোন আদালতে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারেন। এই রাস্তাটি শুরু হয় মহানগর দায়রা আদালতের পাশ ঘেষে যাওয়া পাটুয়াতোলির রাস্তা, এবং শেষে গিয়ে মিশে তাঁতীবাজার মোড়। তাই মূল সমস্যাটি এই রাস্তা ঘিরেই। প্রায় প্রতিদিন সকালে বহিরাগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও রিকশা এই পথ দিয়েই পারাপার করে যা আইনজীবীদের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় । উল্লখ্য যে সকাল বেলাটাই আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীরা ব্যস্ততম সময় কাটায়। সুতরাং এমন সময় আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করাটা জরুরি।
বাস্তবিক অর্থে, আইনজীবীদের কেন্দ্রস্থলটাই যেন তাদের আপন নয়। প্রতিদিন এই যানজটের কারনে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন সকালে বহিরাগত যানবাহন এই পথটি অবরুদ্ধ করার ফলে আদালত প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। প্রায় ৫-১০ মিনিট সময় লেগে যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড় ঠেলে আগানো আর গাড়ি পাড় হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা। কোন সময় রিকশার গুতায় গাউন ছিড়ে যাওয়ার ভয়, আবার কোন সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কা। এই বিশৃঙ্খলার শিকার হচ্ছেন আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরাও। দেখা যায়, কয়েক মিনিট দেড়ি হওয়াতে অনেকে সঠিক বিচার থেকেও বঞ্চিত হয়ে পড়েন।
এই গলির দুপাশে রমরমা ব্যবসা জমিয়েছে ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতা ও কাঁচা বাজার। তাই রাস্তাটি কম প্রশস্ত হওয়ায় কোন বড় গাড়ি তা পাড় করতে গেলে আধা ঘন্টা পর্যন্ত আটকিয়ে থাকে। ফলে একই জায়গায় অনেক মানুষের জটলা পাকে। এত লম্বা সময় একটি আদালতের প্রধান পথ অবরুদ্ধ থাকায় আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রমেও বিঘ্ন ঘটে।
আদালতের প্রেক্ষাপটে সময় অতীব মূল্যবান। কেননা, এক দুই মিনিটের জন্য যে কেউ সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। একজন আইনজীবীর আদালতে প্রবেশ করতে বিলম্ব হলে তার মক্কেল তার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা হয়। একটি আদালতপাড়া হওয়া চাই গাড়ির হর্ন ও যানজটমুক্ত। সুতরাং ঢাকা জজ কোর্ট এলাকা থেকে অনতিবিলম্বে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা এখন সময়ের দাবী।
লেখক : অ্যাডভোকেট ও এক্রেডিটেড মিডিয়েটর