বগুড়ার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে নারী নির্যাতন দমন আইনে করা এক মামলায় তাঁকে বুধবার (৬ মার্চ) রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হিরো আলম ও তাঁর শ্বশুর সাইফুল ইসলাম থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছিলেন। বুধবার রাতে দুই পক্ষকে থানায় ডাকা হয়। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সাইফুল ইসলামের অভিযোগটি নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা হিসেবে রেকর্ড করে হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সনাতন চক্রবর্তী আরও জানান, হিরো আলমকে (আজ) বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, হিরো আলমের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনে আহত তাঁর স্ত্রী সাদিয়া বেগম ওরফে সুমিকে (২৪) মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় শ্বশুর সাইফুল ইসলাম বুধবার বিকেলে হিরো আলমের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
তবে পুলিশ বলছে, এক দিন আগেই মঙ্গলবার শ্বশুর সাইফুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মারধর, হত্যাচেষ্টা ও পাঁচ লাখ টাকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলে থানায় আলাদা লিখিত অভিযোগ করেছেন হিরো আলম।
বগুড়ার সদর উপজেলার এরুলিয়া শাহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের থানায় করা অভিযোগে বলা হয়, তাঁর জামাই হিরো আলম অনেক দিন থেকেই মেয়ে সাদিয়া বেগম ওরফে সুমির কাছ থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করছেন। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর তাঁর মেয়ের মাধ্যমে জামাইয়ের হাতে এক লাখ টাকা তুলে দেন। কিন্তু ৫ মার্চ দুপুরে হিরো আলম আরও এক লাখ টাকা দাবি করেন। এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর মেয়েকে মারধর করা হয়।
এদিকে হিরো আলম থানায় করা অভিযোগে বলেন, ৫ মার্চ রাত আটটার দিকে স্ত্রী ও শ্বশুরের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়। এর জেরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর সদর উপজেলার আরজি পলিবাড়ি গ্রামের বাড়িতে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এর প্রতিবাদ করলে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে মারধর করেন। একই সঙ্গে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। শোকেসের ড্রয়ার থেকে পাঁচ লাখ টাকা, দুটি মুঠোফোন নিয়ে যান শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ সময় তাঁরা ঘরের বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করেন এবং হত্যারও হুমকি দেন। তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে তিনি বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বুধবার হিরো আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মুঠোফোন ধরেননি। ফেসবুক মেসেঞ্জারে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
এই অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহিম গণমাধ্যমকে বলেন, উভয় পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে। দুই পক্ষকে মুখোমুখি করে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলা হবে।
বগুড়ার প্রত্যন্ত এরুলিয়া গ্রামে একসময় সিডি বিক্রি করতেন হিরো আলম। সিডি যখন চলছিল না তখনই মাথায় আসে কেবল সংযোগ বা ডিশ ব্যবসার। এই ব্যবসার সুবাদে মিউজিক ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে প্রকাশ শুরু করেন তিনি। অনলাইনে প্রায় ৫০০ মিউজিক ভিডিও ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমের আলোচনায় আসেন হিরো আলম। ভিডিওগুলোর নির্দেশনা ও অভিনয় করেন তিনি নিজেই। এসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তাঁর ভিডিও নিয়ে কৌতুক শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে করা হয় বিভিন্ন ট্রল।
হিরো আলম এরই মধ্যে ‘মার ছক্কা’ নামে একটি চলচ্চিত্রে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বলিউড পরিচালক প্রভাত কুমারের ‘বিজু দ্য হিরো’ নামে চলচ্চিত্রেও অভিনয় করছেন তিনি। ২০১৬ সালে ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এসব পরিচিত কাজে লাগিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে হেরে যান তিনি।