চট্টগ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদার করেছে জেলা প্রশাসন। গেলো এক বছরেই দেড় হাজারেরও বেশি অভিযান পরিচালনা করে ৪ হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে এসব অভিযানে। সব মিলিয়ে জরিমানা করা হয়েছে পৌনে দুই কোটি টাকা।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে ১ হাজার ৬১৫টি। এসব অভিযানে ৪ হাজার ৩৭টি মামলায় ৭৭৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ৩ হাজার ৬৪৯ জনকে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। টাকার অঙ্কে যা ১ কোটি ৭৭ লাখ ১৪ হাজার ৯৬৯ টাকা।
এর মধ্যে ২০১৮ সালের মার্চে ৯১টি অভিযানে ২১২টি মামলায় ২৯ জনকে কারাদণ্ড ও ১৮৫ জনকে ৮ লাখ ৩০ হাজার ৮০০ টাকা অর্থদণ্ড, এপ্রিলে ১২১টি অভিযানে ২৬০টি মামলায় ৪২ জনকে কারাদণ্ড ও ২২৯ জনকে ১৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, মে-তে ২৩৩টি অভিযানে ৯৮১টি মামলায় ৯১ জনকে কারাদণ্ড ও ৯০৯ জনকে ৩২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং জুনে ৮১টি অভিযানে ২৯০টি মামলায় ৭২ জনকে কারাদণ্ড ও ২১৭ জনকে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৩০ টাকা জরিমানা করা হয়।
অন্যদিকে জুলাইয়ে ১৩২টি অভিযানে ২৬৭টি মামলায় ৪০ জনকে কারাদণ্ড ও ২৩৬ জনকে ১২ লাখ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, আগস্টে ১১০টি অভিযানে ৩২১টি মামলায় ৫৮ জনকে কারাদণ্ড ও ২৯৯ জনকে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৪ টাকা অর্থদণ্ড, সেপ্টেম্বরে ১০৪টি অভিযানে ৩১২টি মামলায় ৪০ জনকে কারাদণ্ড ও ২৮৫ জনকে ১১ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ টাকা অর্থদণ্ড এবং অক্টোবরে ১৩৩টি অভিযানে ২৬৪টি মামলায় ৩৫ জনকে কারাদণ্ড ও ২৪৫ জনকে ১৬ লাখ ২৯ হাজার ২২৫ টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়াও নভেম্বরে ১৩২টি অভিযানে ২৩৫টি মামলায় ৩৪ জনকে কারাদণ্ড ও ২১১ জনকে ১৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭০০ টাকা অর্থদণ্ড, ডিসেম্বরে ১৯৬টি অভিযানে ১৯৫টি মামলায় ৪৫ জনকে কারাদণ্ড ও ১৭৪ জনকে ৭ লাখ ১৫ হাজার ১০০ টাকা অর্থদণ্ড, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১২৮টি অভিযানে ২৬৯টি মামলায় ৯৭ জনকে কারাদণ্ড ও ২৫৭ জনকে ১৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫০ টাকা অর্থদণ্ড এবং ফেব্রুয়ারিতে ১৫৪টি অভিযানে ৪৩১টি মামলায় ১৯৪ জনকে কারাদণ্ড ও ৪০২ জনকে ১৯ লাখ ৮৯ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তা অধিকার আইন, মোটরযান আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, অগ্নি নির্বাপক আইনসহ বিভিন্ন আইনে করা ভ্রাম্যমাণ আদালতের এসব অভিযানের ফলে নগরে অপরাধের মাত্রা সহনীয় মাত্রায় নেমে এসেছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।
তবে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, এক বছরের অর্জনে ‘অত্মতুষ্টিতে’ না ভোগে অভিযান আরও জোরদার করতে হবে।
জেলা প্রশাসনের জেএম (জুডিশিয়াল মুন্সিখানা) শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার উজলা রানী চাকমা গণমাধ্যমকে জানান, ভেজাল ও বাসি খাবার, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি, মাদকের বিস্তার, অবৈধ মোটরযান চলাচলসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তবে জরিমানা কিংবা মামলা দেওয়া আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য নয়। আমরা চাই এসব অভিযানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে। অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনতে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাশহুদুল কবীর গণমাধ্যমকে জানান, নগরবাসীর জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সহ জীবনযাত্রার মান আরও বাড়াতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের অংশ হিসেবে নানা অনিয়ম রোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
তিনি বলেন, ইভটিজিং, ভেজাল খাদ্য, মাদক, দ্রব্যমূল্যেরে ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম আরও বাড়িয়ে চট্টগ্রামে অগ্নিনির্বাপক আইন বাস্তবায়নে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। সূত্র : বাংলানিউজ