এফিডেভিট কমিশনারের সামনে মামলায় নিয়োজিত আইনজীবীকে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ অপ্রয়োজনীয় ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে আদেশটি প্রত্যাহারের দাবীতে আইনজীবীদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় মঙ্গলবার এক মানববন্ধনের আয়োজন করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ডঃ মোমতাজউদ্দিন আহমদ মেহেদী। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তার মুখোমুখি হয়েছেন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি প্রিন্স মাহামুদ আজিম।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : এফিডেভিট কমিশনারের সামনে মামলায় নিয়োজিত আইনজীবীকে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবীতে প্রায় অর্ধশত আইনজীবীকে নিয়ে মানববন্ধন করেছেন; দাবীটির যৌক্তিকতা কীভাবে ব্যাখ্যা দিবেন?
ড. মোমতাজ উদ্দিন : আমি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক নির্বাচিত সম্পাদক। আমি নির্বাচিত সম্পাদক হওয়ার আগে থেকেই অর্থাৎ আইনপেশায় পদার্পণের শুরু থেকেই আইনজীবীদের স্বার্থ, আইনজীবীদের কল্যাণ যেখানে ক্ষুন্ন হয়েছে সেখানেই আমি আন্দোলনের মাধ্যমে কঠোর প্রতিবাদ করেছি। এবং যেখানে আইনজীবীদের মান মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় বা আইনজীবীদের স্বার্থ যেখানে লুণ্ঠিত হয় সেসকল জায়গায় আমি সবসময় সচেষ্ট ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। আমি বরাবরই আপোষহীন ছিলাম আইনজীবীদের স্বার্থের ক্ষেত্রে। আপনারা জানেন, বর্তমানে উচ্চ আদালতের এক বেঞ্চ একটি মৌখিক আদেশ দিয়ে এফিডেভিট কমিশনার কে ডেকে বলেছে, মামলার হলফনামা সম্পাদনের সময় ফাইলিং ল’ইয়ার কে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। উচ্চ আদালতের একটি বেঞ্চ এই মৌখিক আদেশ দেওয়ার পর থেকে আইনজীবীরা এফিডেভিট করতে গিয়ে নানারকম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন ও নানাবিধ ঝামেলার মোকাবেলা করছেন। কারন উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশের কারনে ফাইলিং ল’ইয়ার না গেলে হলফনামা সম্পাদন করা হচ্ছে না। এতে করে আমি মনে করি, আইনজীবীদের মর্যাদা এখানে ক্ষুন্ন হচ্ছে। কেননা, আইনজীবীরা হচ্ছেন অফিসার্স অব দ্যা কোর্ট তাই এই ধরণের নির্দেশনা আইনজীবীদের জন্য সত্যিই অপমানজনক ও লজ্জাকরও বটে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : উচ্চ আদালতের দেওয়া মৌখিক রায়টি আইনজীবীদের মর্যাদায় আঘাত করছে বলে কেন আপনার মনে হচ্ছে?
ড. মোমতাজ উদ্দিন : অতিত ইতিহাস থেকে চলে আসছে হলফনামা সম্পাদনের কাজ মুহুরীরা করে থাকেন। মূলত মুহুরিরা হলফনামা কাজের সম্পাদনের জন্য এফিডেভিট সেকশনে যায়, আইনজীবীরা কখনো যায় না। এখানে মুহুরি বা ক্লার্ক দিয়ে এফিডেভিট সেকশনে হলফনামা সম্পাদন করে এটাই চিরাচরিত নিয়ম। হঠাৎ যদি এখন আইনজীবীদেরকে এফিডেভিট সেকশনে যেতে হয় হলফনামা সম্পাদন করার জন্য তাহলে এটাকে শুধু আমি নয় দেশের সকল আইনজীবীরা তাদের সম্মানবোধের উপর আঘাত বলেই ধরে নিবে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : কোনও প্রকার আন্দোলনের মুখে যদি উচ্চ আদালতের এই আদেশ প্রত্যাহার না করে তাহলে আইনজীবীদের করনীয় কি?
ড. মোমতাজ উদ্দিন : যদি উক্ত আদেশ প্রত্যাহার না করে। সেক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই মাননীয় প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। প্রয়োজনে একটা প্রতিনিধি দল মাননীয় প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নব নির্বাচিত কমিটির কাছে বিষয়টা তুলে ধরে উক্ত মৌখিক রায়ের বিরুদ্ধে যৌক্তিক দাবী উত্থাপন করবো। তারপরও যদি কোনও কাজ না হয়, তখন আমরা আইনজীবীরা উচ্চ আদালতের ছুটি শেষে এই বিষয়টিকে নিয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো যতক্ষণ না আমাদের ন্যায্য দাবীর ভিত্তিতে উক্ত আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া না হয়।