খোলা আকাশের নিচে ও বারান্দায় রাখা হয়েছে বিভিন্ন মামলায় জব্দ করা আলামত। চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা আদালতের দুটি মালখানায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় এভাবে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে আলামত। চুরি হচ্ছে আলামত (জব্দ করা গাড়ির যন্ত্রাংশ)। দীর্ঘ সময় ধরে উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকায় অনেক আলামত (গাড়ি) নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ গত সোমবার জেলা মালখানার তালা ভেঙে আলামত চুরির ঘটনা ঘটেছে।
বিচারাধীন বিভিন্ন মামলার দেড় লাখ আলামত সংরক্ষণ করা হচ্ছে চট্টগ্রাম নতুন আদালত ভবনের দুটি মালখানায়। ভবনের নিচতলায় মহানগর এবং দ্বিতীয় তলায় জেলা আদালতের মালখানা। স্থান সংকুলান না হওয়ায় দুটি মালখানার বারান্দা ও আদালত প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মামলার আলামত। এর মধ্যে রয়েছে জব্দ করা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, কার, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও রিকশা। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে এসব আলামত।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আইয়ুব খান গণমাধ্যমকে বলেন, অপরাধ প্রমাণের জন্য যেকোনো মামলায় জব্দ করা আলামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জব্দ তালিকায় থাকা সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে আলামতগুলো শনাক্ত করেন। এ ক্ষেত্রে আলামত যদি নষ্ট হয়ে যায় অপরাধ প্রমাণ করা যাবে না। কারণ, সাক্ষী যে আলামত দেখেছেন তার হেরফের হলে তিনি শনাক্ত করতে পারবেন না। এ ছাড়া আলামতগুলো নষ্ট হয়ে গেলে, মামলা নিষ্পত্তির পর নিলামে বিক্রি করা হলে উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যাবে না। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। তাই গাড়িগুলো রাখার জন্য আলাদা শেড নির্মাণের পরামর্শ দেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।
গত মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, আলামত হিসেবে জব্দ করা কার, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও অটোরিকশা নতুন আদালত প্রাঙ্গণে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। এসব গাড়ির বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে। বেশ কিছু গাড়ির শুধু বডি আছে। কোনোটির চাকা, কোনোটির দরজা আবার কোনোটির গ্লাস নেই। আদালত ভবনের পূর্ব দিকে মালখানার পাশে পড়ে আছে লক্কড়ঝক্কড় মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও রিকশা। ভবঘুরে ও মাদকসেবীরা গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা-দোকানদার গণমাধ্যমকে বলেন, দিনের বেলা গাড়িগুলো এ রকম দেখে যান। পরদিন সকালে দোকান খুলতে এসে দেখেন পাল্টে যায় গাড়িগুলো।
চট্টগ্রাম নগর ও জেলার ৩২ থানার হত্যা, অস্ত্র, ডাকাতি, মাদক, চোরাচালানসহ বিভিন্ন মামলার আলামত বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত মালখানা দুটিতে সংরক্ষণ করা হয়। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর আলামত হিসেবে জব্দ করা মদ, ফেনসিডিলের বোতল, ইয়াবা বড়ি, গাঁজা ধ্বংস করা হয়। আর গাড়ি, শাড়িসহ ব্যবহার্য জিনিস মালখানা থেকে প্রকাশ্যে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। বিক্রির পর ওই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, স্থান সংকুলান না হওয়ায় কিছু আলামত মালখানার বাইরে রাখা হয়েছে। নিষ্পত্তি হওয়া মামলার তালিকা নিয়ে আলামতগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। মালখানার বাইরে নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, দুটি মালখানা থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৬০টির বেশি আলামত ধ্বংস কিংবা নিলামে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে প্রতিদিন গড়ে ৪০টির বেশি মামলার আলামত মালখানায় আসে।
চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক বিজন কুমার বড়ুয়া বলেন, জেলা মালখানায় চুরির ঘটনার তদন্ত চলছে। মালখানার বাইরে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরে রাখা আলামতগুলো যাতে চুরি না হয়, এ জন্য নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
সরেজমিন আইনজীবী, পুলিশ ও বিচারপ্রার্থী ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আদালত প্রাঙ্গণে তাঁরা সবাই উৎকণ্ঠায় থাকেন। কারণ খোলা আকাশের নিচে থাকা গাড়িগুলোয় গ্যাস সিলিন্ডার ও তেলের ট্যাংক রয়েছে।
সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে যেকোনো সময় অগ্নিকাণ্ডসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে। আদালত ভবন–সংলগ্ন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ও অবস্থিত। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেঁষে রাখা হয়েছে কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন মামলার আলামতের গাড়ি। সূত্র : প্রথম আলো