বাঙালি বিচারপতি পিনাকী চন্দ্র ঘোষকে ভারতের প্রথম লোকপাল হিসেবে নিযুক্ত করতে চলেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার৷ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তিনিই হবেন ভারতের প্রথম লোকপাল। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। খবর ডয়চে ভেলের।
ছয় দশক আগে ভারতে দুর্নীতি-বিরোধী সর্বোচ্চ সংস্থা ও পদাধিকারী ‘লোকপাল’’ নিয়োগের দাবি উঠেছিল৷ সেই থেকে তর্ক-বিতর্ক চলছেই৷২০১১ সালে লোকপালের দাবিতে অনশনে বসে পুনরায় দেশজুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন প্রবীন সমাজসেবী আন্না হাজারে৷তার জেরে পূর্বতন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ২০১৩ সালে সংসদে লোকপাল বিল পাশ করায়৷ কিন্তু তাতেও জট কাটেনি৷ ২০১৪ সালের গোড়ায় লোকপাল ও লোকায়ুক্ত আইন কার্যকর হয়৷ কিন্তু লোকপাল হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি৷
আদালতে বিচারপতি পিনাকী চন্দ্র ঘোষকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সৌম্য চক্রবর্তী৷ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভারতের স্বাধীনতার পর এই প্রথম লোকপাল নিয়োগ হচ্ছে৷ একজন বাঙালিকে লোকপাল হিসেবে বেছে নেওয়ার ঘটনা বাঙালি হিসেবে বড় আশার কথা৷ ১৯৮৮ সাল থেকে ওকে চিনি৷ একসঙ্গে ওকালতি করেছি৷ অসাধারণ ভালো মনের মানুষ৷ পরোপকারী হিসেবে সুনাম আছে ওর৷ রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতি ওর দুর্বলতা রয়েছে৷ ওর পূর্বপুরুষ রামকৃষ্ণের ব্যক্তিগত সান্নিধ্য পেয়েছেন৷ বিচারপতি হিসেবে বহু মামলায় মনে রাখার মতো রায় দিয়েছেন৷ বিচারপতি হিসেবে অবসর নেওয়ার পর মানবাধিকার কমিশনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি৷’
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সরকারি ঘোষণার পর পদের দায়িত্ব বুঝে নেবেন পিনাকী চন্দ্র৷ উনি ছাড়াও লোকপালের অন্যান্য ‘জুডিশিয়াল’ সদস্যরা হলেন বিচারপতি দিলীপ বি ভোঁসলে, বিচারপতি প্রদীপ কুমার মোহান্তি, বিচারপতি অভিলাষা কুমারী ও বিচারপতি এ কে ত্রিপাঠী৷ আর ‘নন জুডিশিয়াল’ সদস্য হিসেবে থাকছেন– দিনেশ কুমার জৈন, অর্চনা রামাসুন্দরম, মহেন্দর সিং ও ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ গৌতম৷
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ‘লোকপাল নির্বাচন কমিটি’ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ অনুসন্ধান কমিটির পাঠানো নামের তালিকা থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে বাঙালি বিচারপতির নাম৷ মোদী ছাড়াও কমিটির সদস্যরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, প্রবীণ আইনজীবী মুকুল রোহতগি এবং লোকসভার কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে৷
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী শীর্ষেন্দু সিংহরায় জানান, ‘১৯৬০ সালে প্রথম লোকপালের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এক বাঙালি বিচারপতি অশোক কুমার সেন৷ এতবছর পর লোকপালের শীর্ষে বসছেন আরেক বাঙালি৷ বাঙালি হিসেবে আমরা গর্বিত৷ লোকপালের অর্থ জনতার রক্ষক৷ যার কাছে প্রধানমন্ত্রীসহ সবার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জানানো যাবে৷ দীর্ঘদিনের আন্দোলন চলছিল৷ আজ সেই অন্দোলন সফল হলো৷’’
প্রসঙ্গত, পিনাকী চন্দ্র ঘোষের বাবা ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি শম্ভু চন্দ্র ঘোষ৷পিনাকী চন্দ্র ঘোষের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৮ মে, গোয়াবাগানে৷তার এখন বয়স ৬৬ বছর৷১৯৯৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন৷পরে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হন৷ তারপর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন৷২০১৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন৷
বর্তমানে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পিনাকী৷তিনি তার বেশকিছু রায়ের কারণেও বিখ্যাত৷