নোয়াখালীর সুবর্ণচরে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনার মূলহোতা রুহুল আমিনকে দেয়া এক বছরের জামিন আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন (রিকল) হাইকোর্ট। শনিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিশেষ ব্যবস্থায় এ আদেশ দেন।
এ সময় বিচারপতিদের খাস কামরায় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় ও অমিত তালুকদার।
এর আগে গত সোমবার (১৮ মার্চ) হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুহুল আমিনের জামিনের বিষয়ে রুল জারিসহ এক বছরের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। তবে জামিনের খবর গত ২১ মার্চ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এ নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায় সর্বত্র। বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে শনিবার ছুটির দিন থাকা সত্ত্বেও আদেশটি রিকল করে জামিন বাতিল করে আদেশ দেন আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও সর্বোচ্চ আদালতের মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘সুবর্ণচরের গণধর্ষণের ঘটনায় হাইকোর্ট আগের দেয়া জামিন আদেশ রিকল করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৫ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।’
সাইফুর রহমান বলেন, ‘এর আগে গত ১৮ মার্চ রুহুল আমিনের জামিন হলেও তিনি কারামুক্তি পাননি। হাইকোর্টের আজকের এ আদেশের ফলে তার জামিন আর থাকছে না। এখন পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে, তিনি আর কারামুক্তি পাচ্ছেন না।’
আদেশের পর সংশ্লিষ্ট কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় জানান, আজ ছুটির দিন হলেও হাইকোর্টের জামিন দেয়া সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় বিচারপতিদের খাস কামরায় বসেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বলেন, মামলায় আটজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আছে। জামিন আবেদনের তথ্যে তা উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে রুহুল আমিন হুকুমদাতা। অথচ জামিন আবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়নি, যা গুরুতর তথ্য গোপন। বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। হাইকোর্ট রুহুল আমিনের জামিন বাতিল করেছেন। ২৫ মার্চ পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে চার সন্তানের জননীর সঙ্গে কয়েক জনের কথাকাটাকাটি হয়। এর জেরে রুহুল আমিনের নির্দেশে ১০-১২ জন তাদের বাড়িতে গিয়ে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে ওই নারীকে গণর্ধষণ ও মারধর করে।
এ ঘটনায় নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে ৯ জনের নামে মামলা করেন। মামলার পর গত ২ জানুয়ারি গভীর রাতে উপজেলার ৫ নম্বর চরজুবলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারের পর তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়। তারা এখন নোয়াখালী কারাগারে। রুহুল আমিন ছাড়া কারাগারে থাকা অন্য আসামিরা হলেন- মো. সোহেল, বাদশা আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসু, সোহেল, বাদশা আলম, জসিম, বেচু, স্বপন, হাসান আলী বুলু ও ছালাউদ্দিন।
ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করেন, গত ৩০ ডিসেম্বর পাংখারবাজার ১৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসামিরা তার স্ত্রীকে তাদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে বলেন। তিনি তাতে রাজি না হলে এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে যুবকেরা তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। ওইদিন রাতেই ১০-১২ জন লোক তাদের বাড়িয়ে গিয়ে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে অস্ত্র দেখিয়ে ওই নারীকে ঘরের বাইরে নিয়ে গণধর্ষণ ও বেদম মারধর করে। ওই নারীকে গলা কেটে হত্যারও চেষ্টা করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সবাই চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমিনের লোক। পরদিন প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই নারীকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।