ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ :
২০১৯ সালের ৪ মার্চ তারিখে এক রিট আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছেন, ‘এটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক, স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তুানদের আমরা এখনও যাচাই-বাছাই করে চলেছি, যে তারা শ্রেষ্ঠজনক কিনা!’ সত্যিই তো এটা একটি জাতির জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার। কিন্তু কেন এই যাচাই-বাছাইয়ের সাপ-লুডু খেলা? কেননা, এর একটি যৌক্তিক কারণ রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন বাঙালি জাতির সূর্যসন্তান। তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি আমাদের লাল সবুজের পতাকা আর বিশ্বের বুকে এক গর্বিত মানচিত্র। ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটি আমাদের কাছে অনেক বড় মাহাত্ম্যময়। মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি শুনলেই শ্রদ্ধায় নত হয়ে ওঠে হৃদয়। একজন মুক্তিযোদ্ধাকেও যদি আমরা অপমান করি তবে তা হবে আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সেই সঙ্গে এ কথাটিও দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমাদের সমাজে যদি একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাও বর্তমান থাকে, আর তারা যদি একজন মুক্তিযোদ্ধার সম্মান দাবি করে তবে সেটা হবে আমাদের দেশ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা সব শহীদের সঙ্গে প্রতারণা। সুতরাং আমাদের সমাজে কোনো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারবে না! তারা দন্ডনীয় অপরাধে অপরাধী। আর তাই আমার এবারের দাবি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির আমলে প্রায় ২২ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে সাড়ে এগারো হাজার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা থাকার অভিযোগ কেন পাওয়া যাচ্ছে? এটার জন্য কে দায়ী? দায়ী হচ্ছে আমাদের প্রক্রিয়া। মুক্তিযোদ্ধা নিবন্ধীকরণের বা অন্তর্ভুক্তিকরণের যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়া এবং ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটির সংজ্ঞায়ন মোট বারোবার করা হয়েছে। সর্বশেষ কয়েক দিন আগেও করা হলো। প্রশ্ন হলো, আমরা এতবার কেন মুক্তিযোদ্ধা শব্দটির সংজ্ঞায়ন করছি?
১৯৭২ সালে কিন্তু একটি অর্ডারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু নিজেই মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায়ন করেছেন। ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ থাকতে পারে। অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু সবাইকে এক কাতারে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ফেলা তো মেনে নেওয়া যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জাতি ও কালের প্রয়োজনে বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা খেতাব আমরা চেয়েছি। তারাও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু এই যে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটির সংজ্ঞায়ন নিয়ে আমরা বারো দফা পার হলাম, এর ফলে মুক্তিযোদ্ধা শব্দটির বাণিজ্যিকীকরণ হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা নিজেরা নিজেদের এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত করছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাউকে সার্টিফিকেট দিলেই তিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাচ্ছেন এবং নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু এটি একটি ত্রæটিপূর্ণ প্রক্রিয়া। ফলে দুর্নীতির সুযোগ থেকে যাচ্ছে এবং প্রক্রিয়াটি মোটেও স্বচ্ছ নয়। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাব থাকারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেমন উত্তরবঙ্গের এক আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। তার এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছয়টি মিডিয়াতে লাইভ বলেছেন, এ সংসদ সদস্য কখনও মুক্তিযুদ্ধ করেননি কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, ওই কমান্ডার ছয়টি মিডিয়াতে কথা বলার ১৫ দিনের মাথায় বলছেন, না, ওই সংসদ সদস্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি যুদ্ধ করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ১৫ দিনের মাথায় যদি মুক্তিযোদ্ধা বানানো যায়, তাহলে কতখানি টাকার খেলা হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে দেখতে পারছি মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিয়ে একটা শ্রেণি বাণিজ্যিকীকরণ করছে এবং আমরাই সেই সুযোগ দিচ্ছি।
এ রকম উদাহরণের শেষ নেই। গণমাধ্যমের বরাতে আমরা জানতে পেরেছি, গাজীপুরে প্রকাশ্যে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট বেচাকেনা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভুক্তভোগী একজন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে একাত্তর টেলিভিশনের লাইভ প্রোগ্রামে রিং করে বলেছেন, ‘স্যার যদি এভাবে চলে তাহলে আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় যাব?’ কী লজ্জাজনক ব্যাপার! স্বাধীনতার এত বছর পরে এসেও আমাদের জাতি হিসেবে এসব জঞ্জাল সামলাতে হচ্ছে!
যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের একটি মামলা আছে। এক রাজাকার মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে, বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন। করে আহত হলেন। তিনি নভেম্বরের দিকে কলকাতায় গেলেন চিকিৎসা করতে। দেশ স্বাধীন হলো। তিনি আহত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে দেশে ফিরলেন। বর্তমানে তিনি আসীন আছেন তার এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে। এখন এ কমান্ডার কী করে আমার দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করতে পারে? এ কমান্ডারদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ কি আমরা নিতে পেরেছি? পারিনি।
আমার সোজাসাপ্টা দাবি, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মেনে নেওয়া হবে না। আমাদের প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে বা সংশ্লিষ্ট মহল থেকে কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? যেখানে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নিজেই দুর্নীতিবাজ, নিজেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেখানে কেন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না? আমাদের দেশে যে আইনের অভাব রয়েছে তা কিন্তু নয়। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা কিন্তু আমাদের প্রচলিত আইনেই রয়েছে।
আমাদের দন্ডবিধির ৪১৬ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি অন্যের রূপ ধারণ করে প্রতারণা করে তবে তা একটি দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি নিজেকে অন্য কোনো ব্যক্তি বলে প্রতারণা করে অথবা জ্ঞাতসারে কোনো ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তি বলে চালিয়ে প্রতারণা করে অথবা নিজেকে বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে সে নিজে বা সে ব্যক্তি অন্য যে ব্যক্তি নয় সে ব্যক্তি বলে চালিয়ে প্রতারণা করে, তবে ওই ব্যক্তি অপরের রূপ ধারণ করে প্রতারণা করেছে বলে গণ্য হবে।’ দন্ডবিধির ৪১৯ ধারা অনুযায়ী এ অপরাধীর কমপক্ষে তিন বছর জেল হওয়ার বিধান রয়েছে। তাহলে কেউ যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দেয় তবে তা দন্ডবিধির ৪১৬ ধারা অনুযায়ী একটি দন্ডনীয় অপরাধ এবং দন্ডবিধির ৪১৯ ধারা অনুযায়ী এ অপরাধীর কমপক্ষে ৩ বছর জেল হওয়ার বিধান রয়েছে।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু আমাদের দন্ডবিধি অনুযায়ী জালিয়াতির অপরাধও সম্পাদন করছে। দন্ডবিধির ৪৬৩ ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি যদি জনসাধারণের কিংবা কোনো ব্যক্তিবিশেষের ক্ষতিসাধনের জন্য অথবা কোনো দাবি বা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অথবা কোনো ব্যক্তিকে তার সম্পত্তি ত্যাগে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে অথবা কোনো প্রকাশ্য বা অনুক্ত চুক্তি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে অথবা কোনো প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে বা যাতে প্রতারণা সংঘটিত হতে পারে এরূপ অভিপ্রায়ে, কোনো মিথ্যা দলিল কিংবা দলিলের অংশবিশেষ প্রণয়ন করে তবে ওই ব্যক্তি জালিয়াতি করেছে বলে পরিগণিত হবে।’ আবার দন্ডবিধির ৪৭১ ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি যদি প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধুভাবে এমন একটি দলিলকে খাঁটি দলিল হিসেবে ব্যবহার করে, যে দলিলটি একটি জাল দলিল বলে সে জানে অথবা বিশ্বাস করে অথবা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে, তবে সে ব্যক্তি যেন সে নিজে দলিলটি জাল করেছে, এমনভাবে দন্ডিত হবে।’ দন্ডবিধির ৪৬৫ ধারা অনুযায়ী এ অপরাধীদের কমপক্ষে দু’বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম অথবা অর্থদন্ড দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
এখন কথা হলো, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা মূলত নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে একটি ভুয়া সনদের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে প্রতারণা ও জালিয়াতি করছে। প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে যদি কোনো কাজ করা হয়, সেটা তো প্রতারণাই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট প্রদর্শন করে কোনো ব্যক্তি যদি ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নেয় তার মানে ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি চুরি করছে। রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তাহলে তাকে কেন ফৌজদারি আইনের আওতায় আনা হবে না?
এ ছাড়া, দন্ডবিধির ১৯৮ ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি যদি কোনো সার্টিফিকেট বাস্তব গুরুত্বপূর্ণ কোনো দিক হতে মিথ্যা বলে জানা সত্তে¡ও দুর্নীতিমূলকভাবে উহাকে সত্য বা খাঁটি সার্টিফিকেট হিসেবে ব্যবহার করে বা করার চেষ্টা করে, তবে সে ব্যক্তি স্বয়ং মিথ্যা সাক্ষ্য দান করলে যেভাবে দন্ডিত হতো, এক্ষেত্রেও সে সেভাবে দন্ডিত হবে।’ এবার, দন্ডবিধির ১৯৩ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা সার্টিফিকেট দিয়ে কেউ অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করলে তার তিন থেকে সাত বছরের জেল হতে পারে।
মনে রাখতে হবে, দন্ডবিধি আইন, এমনকি সাংবিধানিক আইনের অধীনেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। যেমন, একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তার অধিকার হরণ হচ্ছে বলে উচ্চ আদালতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে রিট মামলা করতেই পারেন। আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১-এ বলা আছে বাংলাদেশের নাগরিকের মৌলিক অধিকারের একটি হচ্ছে তার সুনাম ক্ষুণœ না হওয়া। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কারণে যেহেতু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানি হচ্ছে, তাহলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে রিট মামলা উচ্চ আদালতে চলতেই পারে।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরির ক্ষেত্রে সব সময় সিন্ডিকেট কাজ করে। যে কমান্ডার কমান্ড করছেন বা মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ ইস্যু করছেন, যে নেতা-মন্ত্রী বা যারা মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ ইস্যুতে প্রভাব বিস্তার করছেন, যারা সহযোগিতা করছেন সবকে বর্তমান আইনের আওতায় আনা সম্ভব।
আরও দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, যারা মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও প্রতারণা করছে, তাদের সন্তানরা সব ক্ষেত্রে সুবিধা পাচ্ছে। অন্যদিকে যে পরিবারগুলোয় শহীদ হয়েছে, সে পরিবারগুলো উঠে আসতে পারেনি। এটা তো সত্য, অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আজ রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। যারা এক সময় অস্ত্র হাতে অনিশ্চয়তার পথে (কারণ তারা তো জানত না নয় মাসে দেশ স্বাধীন হবে) যুদ্ধ করেছিল তাদের অনেকে এখন ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের জন্য আমরা কিছু করতে পারিনি। সেখানে যদি একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবার সুযোগ-সুবিধা নেয় তা কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না।
ভালো একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিবিদ বা ভালো নাগরিক হওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা হওয়া আবশ্যক না। কিন্তু একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে কোনোদিনও ভালো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নাগরিক বা রাজনীতিবিদ হওয়া সম্ভব না। তার সন্তানদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সে তো প্রতারক। তাকে বা তার সন্তানকে কেন সুবিধা দেওয়া হবে? সে যেসব সুবিধা পাচ্ছে সেটা আমার আপনার টাকা। আমরা যে কর দিই সেই টাকা। আমাদের করের টাকায় কেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সুবিধা নেবে? তার সন্তানরা কেন সুবিধা পাবে?
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও যারা চাকরি করছে, প্রমাণ হলে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা উচিত। যেসব সুবিধা তারা নিয়েছে তা ফেরত নেওয়া উচিত। তাদের ওপর অর্থ জরিমানাসহ যে দÐ আছে তা অর্পণ করা উচিত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ইতোমধ্যে অনেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে ভাতাসহ নানা উপায়ে প্রচুর আর্থিক সুবিধা নিয়েছে। সেসব অর্থ ফেরত নিতে হবে। রাষ্ট্রের স্বাভাবিক আইনে সেটা সম্ভব। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা অবৈধভাবে সম্পত্তির মালিক হয়েছে। তা তাদের ফেরত দিতে বাধ্য করতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র বাদী হয়ে মামলা করতে পারে। ফৌজদারি আইনের ক্ষেত্রে পুলিশ বাদী হতে পারে।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্তিতে যারা সহযোগিতা করেছে, তারা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সবাই সমান। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা সমান সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তাহলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন তারা অপরাধী। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের মাধ্যমে সেটা সম্ভব।
মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াটা যদি স্বচ্ছ রাখতে হয় সেক্ষেত্রে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে সে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্ব থাকতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম হতে হবে প্রকাশ্যে। সাংবাদিকরা চাইলে বসে শুনবেন। বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক বিতর্কিত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আপত্তি উপস্থাপন করতে পারবেন। আমাদের দেশে কত বিষয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। অথচ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করার মতো একটি জাতীয় সংবেদনশীল বিষয়ে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি তোলা কী আমার পক্ষে খুব বেশি কিছু চাওয়া?
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইনের শিক্ষক।