নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের মূলহোতা ও প্রধান আসামি মো. রুহুল আমিনের আইনজীবী মো. আশেক-ই-রসুল ও হলফকারী (তদবিরকারী) মো. জহিরুদ্দিনেরর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আদালত অবমানার আবেদন শুনানি নিয়ে আজ বুধবার (২৭ মার্চ) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
একই সঙ্গে রুহুল আমিনের জামিনের বিষয়ে জারি করা রুল ও জামিন আবেদন সরাসরি (সামারিলি রিজেক্ট) খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়। অপর পক্ষে ছিলেন রুহুল আমিনের জামিন আবেদনকারী আইনজীবী মো. আশেক-ই-রসুল।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগে ঘটনার মূল হোতা ও মামলার প্রধান আসামি মো. রুহুল আমিনকে গত ১৮ মার্চ এক বছরের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনাদেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় তার জামিন কেন বৃদ্ধি করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরে ২১ মার্চ বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং হাইকোর্টের জামিন আদেশের অনুলিপি হাতে পায় রাষ্ট্রপক্ষ।
অনুলিপি হাতে পেয়ে ওই দিন সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় জানান, আসামি রুহুল আমিনের আইনজীবী আশেক-ই-রসুল জামিন আবেদনটি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে শুনানির জন্য ফাইল করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে তার (রুহুল আমিন) জামিন করান। রাষ্ট্রপক্ষকে বিভ্রান্ত করার ফলে সেদিন আমরা বুঝতেই পারিনি কোন আসামির জামিন হয়েছে।’
বিশ্বজিৎ রায় আরও বলেন, ‘আসামির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিকালে ওই আইনজীবী (মো. আশেক-ই-রসুল) আদালতকে বলেছেন, মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) আসামি রুহুল আমিনের নাম নেই। তাছাড়া মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। এরপর আমরা আদেশটির বিষয়ে গত বৃহস্পতিবারই (২১ মার্চ) আদালতকে অবহিত করি।
এরপর গত ২৩ মার্চ (শনিবার) ছুটির দিনে বিশেষ ব্যবস্থায় বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের চেম্বারে (খাস কামরায়) বসে জামিনের আদেশটি রিকল এবং আদেশ বাতিল করেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের মধ্যবাগ্যা গ্রামে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে চল্লিশোর্ধ এক গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এ পর্যন্ত মূল হোতা ও প্রধান আসামি সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজন ঘটনায় জড়িত থাকার কথা জানিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।