২০০৯ সাল থেকে আইনি সেবা দিয়ে আসছে মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স টু হেল্পলেস প্রিজনার্স অ্যান্ড পার্সনস (এলএএইচপি)। চলতি বছরের ২৮ মার্চ পর্যন্ত আইনি সহায়তা দিয়ে ৫৫৮ জন অসহায় কারাবন্দিকে জামিনে মুক্ত করার কথা জানিয়েছে সংগঠনটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম।
রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে অবস্থিত নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
আইনজীবী তৌফিকা করিম জানান, যে সকল ব্যক্তি মামলা সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, কিন্তু সন্দেহভাজন হিসেবে অথবা অন্যায়ভাবে যাদেরকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়, তাদেরকে ‘অসহায়’ হিসেবে বিবেচনা করে এলএএইচপি। এ ধরনের অসহায় কারাবন্দিদের জামিনের জন্য কাজ করে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে কারাবাস করছেন (ন্যূনতম ৪ মাস) এমন ব্যক্তি এবং তিনি কোন ধারায় আটক, এই ধারায় তার শাস্তি যতদিন হতে পারে তার চেয়ে বেশি দিন ধরে কারাবন্দি কি না, তা বিবেচনা করে জামিনের ব্যবস্থা করে সংগঠনটি।
তিনি আরও জানান, জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত যে কোন মামলার ক্ষেত্রে এবং দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারার ক্ষেত্রে আসামি প্রত্যক্ষভাবে খুনের সঙ্গে জড়িত থাকলে, তার জামিনের জন্য এলএএইচপি কাজ করে না। এ ধরনের মামলায় আসামিকে ফাঁসিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটলে সে ক্ষেত্রে সংগঠনটি জামিনের ব্যাপারে কাজ করে। এছাড়া, যদি কোনো মামলার ব্যক্তিকে অসহায় মনে হয়, আইনজীবীরা মামলাটি বিশদভাবে পর্যালোচনার মাধ্যমে এলএএইচপির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হয়।
তৌফিকা করিমের দাবি, এখন পর্যন্ত ৫৫৮ জন অসহায় কারাবন্দিকে মুক্ত করেছে সংগঠনটি। এনজিও ব্যুরো নিবন্ধিত বাংলাদেশের আর কোনো বেসরকারি মানব সেবামূলক সংস্থা এতো সংখ্যক অসহায় কারবন্দির জামিন করাতে সক্ষম হয়নি।
সংগঠনটি বর্তমানে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, নোয়াখালী, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় এলএএইচপি নিয়োজিত একাধিক প্যানেল আইনজীবীদের সমন্বয়ে অসহায় কারারন্দিদের আইনি সহায়তা দিচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশের সর্বত্র আইনি সহায়তাকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে, প্রতিটি জেলায় প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ করার কর্মপরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনটির।
তৌফিকা করিম বলেন, অনেকেই অসহায়ত্ব আর মিথ্যা অভিযোগের দায় মাথায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বিনা বিচারে এখনো জেল খাটছেন। তাদের যেন আর কারাগারের নির্মম অন্ধকারে বিমর্ষ জীবন কাটাতে না হয়, সে জন্য কাজ করছে এলএএইচপি। পাশাপাশি আমরা যাদের কারামুক্ত করেছি তাদের মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য উপযুক্ত কাউন্সেলিং দেয়া হয়েছে। কারামুক্তির পর বাকি জীবনটা যেন সুন্দর ভাবে কাটে সে লক্ষ্যে তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী।
সংবাদ সম্মেলনে এলএএইচপির নির্বাহী পরিচালক রাশেদুল কাওয়ার জীবন ও মিডিয়া এডভাইজর সাংবাদিক হিরা তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।