সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের পর একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ী বাকিরাও শপথ নিয়ে সংসদে যেতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সংসদে যাওয়া ঠিক হবে কি না, এ বিষয়ে এলাকার মানুষের মত জানতে গণফোরামের মোকাব্বির খান আজ রোববার (৩১ মার্চ) নির্বাচনী এলাকায় নাগরিক সভা ডেকেছেন। তিনি আশা করছেন, ইতিবাচক সমর্থন পাবেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিএনপি থেকে নির্বাচিত ব্যক্তিদের অনেকে সংসদে যাওয়ার পক্ষে। এমন কয়েকজনের সঙ্গে মোকাব্বির খানেরও কথা হয়েছে। বিএনপিতে নির্বাচিত ব্যক্তিদের কয়েকজন প্রথম আলোকেও বলেছেন, স্থানীয় নেতা-কর্মী ও জনগণের কাছ থেকে সংসদে যাওয়ার পরামর্শ পাচ্ছেন তাঁরা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনীত হয়ে বিজয়ী হয়েছেন আটজন। এর মধ্যে গণফোরাম থেকে বিজয়ী দুজনের একজন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ৭ মার্চ শপথ নিয়েছেন। এ কারণে দল ও জোট থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। একই সময়ে সিলেট-২ আসন থেকে বিজয়ী গণফোরামের মোকাব্বির খানেরও শপথ নেওয়ার কথা ছিল। তিনি শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পাল্টান।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মোকাব্বির খান সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে বারবার আগ্রহের কথা জানান। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর মত জানা এবং জোটের অন্যদের সঙ্গে শপথ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর তিনি বিএনপি থেকে নির্বাচিত ব্যক্তিদের কয়েকজনের সঙ্গে শপথের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। জনগণের মত জানতে আজ রোববার নির্বাচনী এলাকায় নাগরিক সভা ডেকেছেন মোকাব্বির খান। এই সভায় গণফোরামের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোকাব্বির খান গণমাধ্যমকে বলেন, যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের পরামর্শ মেনেই শপথের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আজ স্থানীয় পর্যায়ে পাওয়া পরামর্শ নিয়ে দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করবেন। স্থানীয় লোকজনের পরামর্শকে গুরুত্ব দিতে চায় তাঁর দল।
আইন অনুযায়ী, সংসদ বসার তিন মাসের মধ্যে শপথ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ হিসাবে আগামী ৩০ এপ্রিলের আগেই শপথ নিতে হবে ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী প্রার্থীদের। ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ীদের মধ্যে ছয়জন বিএনপির। তাঁরা হলেন বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে মো. হারুন অর রশীদ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া।
এর মধ্যে এই প্রথম ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বিএনপি জিতেছে। এই আসনে বিজয়ী জাহিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এলাকার ৯০ শতাংশ কর্মী-সমর্থক শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার পক্ষে। তাঁরা মনে করছেন, শপথ না নিলে এলাকাটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যাবে।
তবে বগুড়া-৪ আসনে বিজয়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে শপথ নিয়ে বিভক্তি আছে। অনেকে মনে করেন, শপথ নিয়ে কোনো লাভ হবে না। এখন দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তিনি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় একটি সূত্র বলছে, শপথের বিষয়ে হাতে এক মাস সময় আছে। দলের মধ্যে এ ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে মত আছে। অনেকে মনে করেন, এত কম সাংসদ নিয়ে সংসদে তেমন কোনো ভূমিকা রাখা যাবে না। বরং পুনরায় নির্বাচনের দাবি হারিয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সংসদে গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে বিএনপির রাজনীতি গতি পাবে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সমঝোতা বা আলোচনার কোনো আভাস এখনো পায়নি বিএনপি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘৪০ বছর ধরে বিএনপির করি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করা যাবে না। নেত্রীর মুক্তি হলে সংসদে যাওয়ার একটা দরজা উন্মুক্ত হতে পারে।’
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্থানীয় নেতা-কর্মীরা চাচ্ছে সংসদে গিয়ে কথা বলি, যতটুকু পারা যায় কাজ করি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার হয়তো সুযোগ আছে কিন্তু তা মানবিক হবে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বলেন, খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তি ছাড়া কোনো সমঝোতা হতে পারে না। তবে শপথ নেওয়ার বিষয়ে অনেকের আগ্রহ আছে। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ করেই এ ব্যাপারে দলের নীতিনির্ধারকেরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মনে করছেন তাঁরা।
তবে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষস্থানীয় নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না গণমাধ্যমকে বলেন, শপথ না নেওয়ার বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত অটুট আছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছে ঐক্যফ্রন্ট। তাই জোট থেকে নির্বাচিতদের শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির একাধিক নেতার দাবি, দেশের অধিকাংশ মানুষ এমন ‘প্রহসনমূলক’ ভোটে বিরোধী দল থেকে নির্বাচিতদের শপথ নেওয়ার বিপক্ষে। কেউ কেউ স্থানীয় নেতা-কর্মীর দোহাই দিয়ে শপথের পক্ষে মত দিচ্ছেন। সূত্র : প্রথম আলো