নাসিমা আক্তার। জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন এক তরুণী। তবে দারুণ মেধাবী। তাই কোনো প্রতিবন্ধকতাই দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। এবার এইচএসসি পরীক্ষার টেবিলে বসে সবার নজর কেড়েছেন দৃষ্টিহীন নাসিমা। মনের ভেতর শুরু হয়েছে স্বপ্নের বীজ বোনা। লেখাপড়া করে আইনজীবী হতে চায় নাসিমা। প্রাথমিক সমাপনী, জুনিয়র সার্টিফিকেট এবং সব শেষ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয় সে।
উচ্চশিক্ষার আশায় এবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে দৃষ্টিহীন নাসিমা। শ্রুতিলেখকের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে। কেন্দ্রটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অধ্যাপক নুরুল ইসলাম জানান, সে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
সে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে শ্রুতিলেখকের সুযোগ দিয়ে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার বলেন, নাসিমা প্রতিবন্ধকতা ভেদ করে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার একটি উদাহরণ। তার অদম্য ইচ্ছার কারণে সে লেখাপড়ায় এগিয়ে যাচ্ছে। নাসিমার এগিয়ে চলা সময়টা ২০০৪ সাল। বাবা বারেক মিয়া ও মা ফিরোজা বেগম এলাকার কিছু লোকজন সঙ্গে নিয়ে মেয়ের দৃষ্টি ফেরার আশায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কেল্লার মাজারের বার্ষিক ওরসে নিয়ে যান দৃষ্টিহীন শিশুকন্যা নাসিমা আক্তারকে।
ভালো গান গাইতে পারে জেনে সেখানে উপস্থিত কিছু লোকের অনুরোধে গান ধরে নাসিমা। গান শুনে উপস্থিত মানুষের ছোট্ট একটি জটলা তৈরি হয়। এদের মধ্য থেকে এগিয়ে আসেন মঞ্জু সমাদ্দার নামে এক ভদ্রলোক। দৃষ্টিহীন নাসিমার প্রতিভা ধরা দেয় তার কাছে। নাসিমাকে পড়ালেখা করানোর জন্য ঢাকার একটি মিশনারিজ স্কুলে ভর্তি করার প্রস্তাব দেন বাবা বারেক মিয়াকে। প্রস্তাবে অবাক হন বারেক মিয়া, দৃষ্টিহীনরা পড়তে পারে! পরে সংসারের অভাব ও দারিদ্র্যের কথা চিন্তা করে নাসিমাকে তুলে দেন মঞ্জু সমাদ্দারের হাতে। তাকে ঢাকার একটি মিশনারিজ স্কুলে ভর্তি করান।
শুরু হয় নাসিমার আলোকিত জীবনের নতুন অধ্যায়। এক ভাই, দুই বোন, বাবা ও মাকে নিয়ে নাসিমাদের বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংদিঘী গ্রামে। চোখে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন ধীরে ধীরে নাসিমার মনের ভেতর শুরু হয়েছে স্বপ্নের বীজ বোনা। লেখাপড়া করে আইনজীবী পেশাকে বেছে নিতে চায়। এলাকার অসহায় মানুষ, যারা আইনের সহযোগিতা থেকে দূরে, তাদের পক্ষে আদালতে লড়তে চায় নাসিমা। নাসিমার বাবা বারেক মিয়া বলেন, সে মায়ের গর্ভ থেকেই দৃষ্টিহীন হিসেবে জন্মগ্রহণ করে।
সংসারে অভাব ও দারিদ্র্যের কারণে তাকে ভালো চিকিৎসা করাতে পারিনি। তবে নাসিমা ছোটকাল থেকেই খুবই মেধাবী। একটি বিষয় একবার শুনলেই সে স্মরণ রাখতে পারে। আগে দুশ্চিন্তায় থাকলেও এখন মেয়েকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছি। পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ একেএম আবুল খায়ের বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাসিমাকে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সে প্রতিদিনই কলেজে নিয়মিত পাঠদানে অংশ নেয়। শিক্ষা বোর্ডের অনুমতিসাপেক্ষে তাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি সে ভালো ফল করবে।