রাম চন্দ্র দাশ :
“অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে—
নির্মল করো, উজ্জ্বল করো, সুন্দর করো হে ॥
—
যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ।
সঞ্চার করো সকল কর্মে শান্ত তোমার ছন্দ।” — — কবি গুরু
“Our Common Future” শিরোনামটি ধার নেওয়া হয়েছে বিখ্যাত Brundtland Commission রিপোর্ট থেকে যা প্রাক্তন ‘World Commission on Environment and Development (WCED) in October 1987’ হিসাবে পরিচিত। যেখানে টেকসই উন্নয়নের সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে, আর তা হলো- “বর্তমান চাহিদাকে মেটানোর ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে বর্তমানকে উপভোগ করাই হল টেকসই উন্নয়ন” (“Sustainable development is development that meets the needs of the present without compromising the ability of future generations to meet their own needs”) অর্থাৎ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদার সাথে আপোষ না করে বর্তমানে কাজ করে যাওয়া- যাতে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরো সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলে যেতে পারি।
যদিও পরিবেশের ইস্যু নিয়ে এই রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল, কিন্তু আজ এই সংজ্ঞা উন্নয়নের সার্বজনীন ধারণায় রূপ নিয়েছে। তাইতো জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ২০১৬-২০৩০ সালে ১৫ বছর মেয়াদী সারা বিশ্বের জন্য “টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Sustainable Development Goal- SDG)” নির্ধারণ করেছে যেখানে ১৭টি লক্ষ্য স্থির করেছে। এর মধ্যে ১৬তম লক্ষ্য হল বিচার বিভাগের সাথে খুবই প্রাসঙ্গিক- “টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজের প্রসার করা, সকলের জন্য ন্যায়বিচারের পথ সুগম করা এবং সকলস্তরে কার্যকরী, জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা।”
এছাড়া, বাংলাদেশে চলমান ৭ম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২১) দলিলেও ‘আইনের শাসন বাস্তবায়ন ও নাগরিকের সুরক্ষা প্রদানের জন্য বিচার বিভাগে সকলের অভিগম্যতাকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ’ বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়াও এই দলিলে ৩০ লক্ষ মামলার জট ও দীর্ঘসূত্রিতা থেকে মুক্তি এবং ক্রমবর্ধমান মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে; এগুলো হল- সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদ মোতাবেক ন্যায়পাল নিয়োগ, একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ, মামলা-ব্যাবস্থাপনাকে কম্পিউটারাইজড করা যাতে নাগরিকের অভিগম্যতা থাকে, আইনজীবীদের জবাবদিহিতা ও ইন্টিগ্রিটি রক্ষার জন্য বার কাউন্সিলকে তাগিদ প্রদান, নিয়মিত বিচারক নিয়োগ, গ্রাম-আদালতকে ঢেলে সাজানো, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে কার্যকর ও গতিশীল করা, জাতীয় আইনগত সংস্থাকে আরো কার্যকরী করে লিগ্যাল-এইড সহায়তার আওতা বৃদ্ধি করা, ক্রমান্বয়ে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ন ডিজিটালাইজড করাসহ সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতের অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি।
উপরোক্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বহুবিধ ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমরা জানি যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিচার-ব্যাবস্থায় (adversarial judicial system) আইনজীবীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যবস্থায় আইনজীবীদের ‘অফিসার-অব-দ্যা-কোর্ট’ বলা হয়, কারণ তারা তাদের মক্কেলের মামলার তথ্যগত ও আইনগত বিষয় উপস্থাপনের মাধ্যমে আদালতকে অর্থাৎ বিচারককে ন্যায়বিচার করতে সহায়তা করে থাকেন। অন্যদিকে,‘কোর্টকে অর্থাৎ বিচারককে অন্ধ বলা হয়’ কারণ তিনি আইনের বাইরে ও উভয় পক্ষের সাক্ষ্যের মাধ্যমে তথ্য এবং আইনগত যুক্তির বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। কাজেই এই পদ্ধতির বিচার-ব্যাবস্থার গুণগত মান অর্থাৎ ন্যায়বিচার অনেকখানি নির্ভর করে আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতা, সততা ও আন্তরিকতার উপর। এছাড়া ‘সোশ্যাল-ইঞ্জিনিয়ার’ হিসাবে একটি প্রতিশ্রুতিশীল ও সুদক্ষ আইনজীবী কমিউনিটি মামলা পরিচালনার বাইরেও নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় ও একটি সুসংহত সামাজ বিনির্মানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই এই একবিংশ শতাব্দীতে বর্তমান প্রজন্মের আইনজীবীগণকে হতে হবে অধিকতর পেশাধারী মনোভাবাপন্ন, দক্ষ, সৎ, নীতিবোধসম্পন্ন ও সমাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল।
সময়ের সাথে সাথে সামাজের চাহিদা বদলায়; এই পরিবর্তিত চাহিদা মোকাবেলায় বিভিন্ন পেশাদারদেরও নতুন জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে হয়। এমনকি, প্রয়োজনে আইন-কানুনও বদলাতে হয়। বিগত ৪৮ বছরে জাতি হিসাবে আমাদের অনেক অর্জন; বিশেষ করে অর্থনৈতিকক্ষেত্রে, এমনকি সামাজিক ক্ষেত্রেও; আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখতে পারছি। এমতাবস্থায় বিভিন্ন পেশার মতো আইন পেশারও অনেক বিস্তৃতি ঘটেছে! অনেক তরুণ আজ ভালো আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন- যা সমাজ, রাষ্ট্র ও বিচার ব্যবস্থার জন্য খুবই আশাব্যাঞ্জক। কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে যে, বর্তমান আইন ও বিধি এবং অন্যান্য সীমাবদ্ধার কারণে শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের ভোগান্তি ও হতাশা বাড়ছে। তবে এসবকিছুর মধ্যে শিক্ষানবীশ ও নতুন আইনজীবীদের প্রতিশ্রুতি ও গুণগত মানের প্রশ্নটি সামনে আসছে- যা একবিংশ শতাব্দীর চাহিদাও বটে। এসব প্রেক্ষিতে আইনজীবীদের অভিভাবক ও নিয়ন্ত্রনকারী সংগঠন হিসেবে বার কাউন্সিলের প্রতি প্রত্যাশাও বেড়েছে। এই প্রত্যাশা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলা করা বার কাউন্সিলের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় চ্যালেঞ্জ! এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ ও সরকার অন্যান্য উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের (যেমন মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি) অভিজ্ঞতার আলোকে একটি বৈজ্ঞানিক ও উন্নত নীতিমালা ও আইনী-কাঠামো তৈরি ও অবলম্বন করবেন এটাই সকলের প্রত্যাশা।
ইদানিং একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়, ‘প্রতিশ্রুতিশীল ও গুণগত মানসম্পন্ন আইনজীবী কম তৈরি হচ্ছে’। ‘প্রতিশ্রুতিশীল ও গুণগত মানসম্পন্ন আইনজীবী’ পেতে হলে এর তৈরির প্রক্রিয়াটি কতটা বৈজ্ঞানিক ও কতটুকু অনুকূল পরিবেশ বিরাজমান তা কিন্তু ভাবতে হবে। যেমন, শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের ৬-মাস শিক্ষানবীশ কালের বিধিবদ্ধ কোন পূর্ণাঙ্গ কোর্স-কারিকুলা বা গাইডলাইন (কী কী জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি শিখবে, কিভাবে শিখবে, কমপক্ষে কত সময় দিতে হবে, কি পরিবেশে শিখবে, কতটুকু সম্মানী পাবে, কতটুকু মর্যদা পাবে?) না থাকায় তাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির কোন সীমারেখা নাই। শিক্ষানবীশদের যদি প্রত্যাশিত শিখনফল ও আনুসাঙ্গিক বিষয়াদি জানা না থাকে তবে তারা অনেক সময় কনফিউসড হতে পারে (শিখেও মনে হতে পারে, তেমন কিছু শিখিনি; আবার না শিখেও মনে হতে পারে অনেক কিছু শিখে ফেলেছি)। বর্তমানে কাজ করে করে ও পর্যক্ষেণ করে শেখার প্রক্রিয়াটিকে আরো গতিশীল করার সুযোগ আছে বলে অনেকেই মনে করেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা হিসাবে এই একবিংশ শতাব্দীতে (এক্সলেন্সের যুগে) এটা আরো সুসংগঠিত হওয়া প্রয়োজন নয় কি?
আবার অনেকেই বলেন, ‘আইনজীবী অনেক বেশি হয়ে গেছেন!’ প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কিসের ভিত্তিতে বলা হয়? আমাদের বার কাউন্সিল বা আইন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা অন্যকোন গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানের কি কোন গবেষণা আছে(!), যে আমাদের বর্তমানে ও ভবিষ্যতে কতজন আইনজীবীর প্রয়োজন? গবেষণা ছাড়া একথাটি কিভাবে বলা হয় তা বোধগম্য নয়। ভারতে ২০১১ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় সেদেশে আইনজীবী অনুপাত জনসংখ্যা হল ১:৮৮৬ জনের মত (https://www.legallyindia.com/wiki/Lawyers_in_India_by_state)। এই অনুপাত বিবেচনা করলে বাংলাদেশে আইনজীবীর সংখ্যাতো ২/৩ গুণ হওয়া প্রয়োজন নয় কি? আরেকটি বিষয় খেয়াল করে দেখবেন, বিভিন্ন জায়গায় (এমনকি উপজেলা লেভেলেও ল’ কলেজের অনুমোদন, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তির অনুমোদন দিন দিন বেড়েই চলছে; অথচ এগুলোর গুণগত মানবৃদ্ধির তেমন কোন তৎপরতা চোখে পড়ে না!
একইসাথে শিক্ষানবীশ ও নতুন আইনজীবীদেরও নিজেদের উন্নয়নের ব্যাপারে আরো একাগ্র হওয়ার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। আমাদের মনে রাখতে হবে একবিংশ শতাব্দী এক্সলেন্সের যুগ; অতি-দ্রুত পরিবর্তশীল ও বর্তমান জটিল সমাজে এবং বিশ্বে আইন পেশার মত একটি গতিশীল পেশায় জায়গা করে নিতে কঠোর অধ্যবসায়ী হওয়া খুবই প্রয়োজন। আর এর জন্য আইনের তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি কোর্টে ও চেম্বারে একাগ্র অনুশীলনের মাধ্যমে প্রায়োগিক অভিজ্ঞতা অর্জন প্রয়োজন, যার মাধ্যমে বিজ্ঞ সিনিয়রদের, বিচারকবৃন্দ, কোর্ট-স্টাফ, মহুরী ও সর্বোপরি মক্কেলদের সহযোগিতা, স্নেহ-ভালবাসা এবং পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ অর্জন করা যায়।
উপরোক্ত জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ও আরো কার্যককরী একটি বিচার বিভাগ বাস্তবায়ন করতে শিক্ষানবীশ ও নতুন আইনজীবীদের উন্নয়নের বিকল্প নাই, কারণ আজকের শিক্ষানবীশ ও নতুন আইনজীবীরাই ভবিষ্যতে বিচার বিভাগকে নেতৃত্ব দিবে; তাই তাদের প্রত্যাশিত পেশাগত উন্নতির জন্য নিচের বিষয়গুলো সুবিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
১) শিক্ষানবীশী ব্যাবস্থার আধুনিকায়ন করা; শিক্ষানবীশকালের জন্য একটি যুগোপযোগি কোর্স-কারিকুলা ও গাইডলাইন প্রণয়ন করা। যাতে শিক্ষানবীশরা কী কী পেশাগত জ্ঞান-দক্ষতা-দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে হবেতার একটি সুস্পষ্ট ধারণা নিয়ে তারা পেশা এগিয়ে নিতে পারেন।
২) বর্তমান পরীক্ষা (অনেকটা মুখস্ত ভিত্তিক) পদ্ধতির সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা, যাতে অত্যাবশ্যকীয় আইনী ধারণাসমূহ এবং কোর্ট-অনুশীলন অর্থাৎ আরো প্রায়োগিক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া যায় ও কম সময়ের মধ্যে পরীক্ষার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যায়।
৩) আইনের আলোকে নিয়মিতএররোলমেন্ট পরীক্ষা পরিচালনা করা (আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবছর কমপক্ষে একবার) এবং এ জন্য একটি পূর্বনিধারিত সূচি ঘোষণা করা (কোন সময়ে কোন পরীক্ষা হবে), এতে শিক্ষানবীশরা নিজেদের পরিকল্পনা তৈরি করে আগাতে পারবে;
৪) আইন অনুযায়ী সকলের প্রতি (যেমন, সরকারী-বেসরকারী-জাতীয়-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে এবং কমবয়স্ক -বেশি বয়স্কদের মধ্যে)সমতা ও বৈষম্যহীন আচরণ করা যাতে কোনধরনের বিভাজন তৈরি না হয়;
৫) শিক্ষানবীশ ও নতুন আইনজীবীদেরকে একটি নীতিমালার আলোকে (যারা নিয়মিত কোর্টে অনুশীলন করেন তাদের ‘প্রয়োজন-ভিত্তিতে’) উৎসাহ-ভাতা প্রদান করা। যাতে এই পেশার প্রতি যাদের অনুরাগ আছে তাদের অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা যেন পেশা নির্বাচনে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়;
৬) শিক্ষানবীশ ও নতুন আইনজীবীদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য বার কাউন্সিল ও স্থানীয় বার সমিতির উদ্যোগে বিভিন্ন স্বল্প-মাঝারি মেয়াদের প্রশিক্ষণ, অবহিতকরণ কোর্সের আয়োজন করা এবং নিয়মিতভাবে সমসাময়িক বিষয়ে সেমিনার-সেম্পোজিয়াম ও প্যানেল-আলোচনার আয়োজন করা। যেখানে বিজ্ঞবিচারকবৃন্দ, সিনিয়র আইনজীবীবৃন্দ ও আইনের শিক্ষকবৃন্দ এমনকি অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও প্রধান বক্তা ও প্যানেল বিশেষজ্ঞ এবং প্রশিক্ষক হিসাবে উপস্থিত থাকতে পারেন। একাজে বার কাউন্সিলের পূর্বের ইতিবাচক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রয়োজনে এসব কাজে বার কাউন্সিল কোন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় বা দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে। এছাড়া পূর্বের মতো ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদেরও এ কাজে যুক্ত করার প্রয়োজন আছে;
৭) শিক্ষানবীশ ও নতুন আইনজীবীরা যাতে আরো সদয় ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ এবং পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের অনুকুল পরিবেশ পান তার ব্যাবস্থা করা এবং এর জন্য একটি কোড অব কন্ডাক্ট তৈরি করা যেতে পারে। যাতে তৎসংশ্লিষ্টরা নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য অনুধাবন করতে পারেন;
৮) শিক্ষানবীশদের উন্নয়ন ও দেখভাল করার জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করে বার কাউন্সিল ও স্থানীয় বারে একটি আলদা কমিটি বা সাব-কমিটি গঠন করে দায়িত্ব প্রদান;
৯) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, বার কাউন্সিল, আইন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যায়ের সমন্বয়ে একটি কমিটির মাধ্যমে আইন শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির (যাতে আইনের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক জ্ঞানের ও নৈতিকতার একটি সঠিক ব্যালেন্স তৈরি হয়) জন্য কাজ করা যেতে পারে।
১০) বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আইনজীবীর পরিমান নির্ধারণ এবং গুণগত মানকে আরো শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করার জন্য অব্যাহতভাবে গবেষণা পরিচালনা করা যাতে এসব বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে ধারণা পরিষ্কার থাকে ও বিভাজন তৈরি না হয়।
১১) ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বার কাউন্সিলের সক্ষমতা আরো অনেক বৃদ্ধি করা প্রয়োজন এবং একই সাথে এর কার্যক্রমকে বিকেন্দ্রীকরণ করে কমপক্ষে বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার বিষয়টিও বিবেচনা করা প্রয়োজন।
১২) উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে বর্তমান সংশ্লিষ্ট আইনী কাঠামো ও নীতিমালা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। যাতে শিক্ষানবীশ ও নতুন আইনজীবীদের উন্নয়ন তথা বিচার বিভাগের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে বার কাউন্সিল ও স্থানীয় বার সমিতিগুলো কার্যকর আরো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে।
এই লেখার উপসংহার টানতে চাই মাননীয় প্রধান বিচারপতির একটি বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশের উল্লেখ করে- “আমি বিজ্ঞ আইনজীবীগণের প্রতি অনুরোধ করবো বিচারপ্রার্থী মানুষের সেবায় আন্তরিকভাবে কাজ করার জন্য। বিচারপ্রার্থী মানুষের কষ্ট লাঘব করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় বিজ্ঞ আইনজীবীগদের দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে হবে। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও বিনয়ী হতে হবে, কিন্তু জ্ঞান চর্চায় বেঞ্চের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে। সিনিয়র আইনজীবীগণ জুনিয়র আইনজীবীগণকে সকল বিষয়ে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলবেন যেন বারে কখনো কোন শূণ্যতা তৈরি না হয়।” —–মাননীয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে সুপ্রীমকোর্ট বার ও বিজ্ঞ অ্যাটর্নী জেনারেল কর্তৃক প্রদত্ত অভিনন্দন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায়; সূত্র: ৭০ ডিএলআর, মার্চ ২০১৮ ইস্যু)
লেখক : অ্যাডভোকেট, ঢাকা জজ কোর্ট; ram.chandra.das@gmail.com