অসৎ উদ্দেশে নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া এবং আপত্তিকর প্রশ্ন করায় সোনাগাজীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
আজ সোমবার (১৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামশ জগলুল হোসেনের আদালতে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সুমন।
সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করে আলোচিত আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন মামলার বিষয়ে বলেন, কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন দিয়ে নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার পূর্বে সে যখন থানায় ওসি সাহেবের রুমে অভিযোগ করতে যান তখন সহযোগিতার বদলে ওসি তাঁকে আপত্তিকর প্রশ্ন করেন। পাশাপাশি সেই কথোপকথনের ভিডিও করে অসৎ উদ্দেশে তা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই অভিযোগে মামলা দায়ের করেছি।
ব্যারিস্টার সুমন আরও জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় সেই ওসির বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
আইনজীবী সুমন বলেন, এসব অভিযোগ তুলে ধরে আমরা আদালতকে বলার চেষ্টা করেছি ওসি সাহেবের রুম যদি নিরাপদ না হয় তাহলে দেশের মানুষ ওসি সাহেবের রুমে যাবে না। আর ওসি সাহেবের রুম যদি নিরাপদ না হয় তাহলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। এভাবে চলতে থাকলে ভিকটিমরা থানায় যাওয়াই বন্ধ করে দেবেন।
এর আগে, সকালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওসির বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন আইনজীবী সুমন। বেলা ২টায় এ আবেদনের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে এ বিষয়ে আদেশ পরে দেবেন বলে জানান।
নুসরাতের পরিবারকে সহযোগিতা না করার অভিযোগে ইতোমধ্যে সোনাগাজী থানা থেকে মোয়াজ্জেমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর পর মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য, ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে অধ্যক্ষ শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাত। সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দু’হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা করেন এবং তা ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায় ওসি মোয়াজ্জেম অত্যন্ত অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় একের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছেন নুসরাতকে। নুসরাতের বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নও করতে দেখা যায় ওসি মোয়াজ্জেমকে।
গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে।
এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।