নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে চরমাকসুমুল গ্রামের এক গৃহবধূকে ‘ধর্ষণের’ পর বিষপানে তার আত্মহত্যার ঘটনায় রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার ওই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ মীমাংসার নামে তথাকথিত সালিশি বৈঠক কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
পাশাপাশি নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূকে ‘ধর্ষণের’ পর বিষপানে তার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা গ্রহণের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হলেও কাউকে আসামি করা হয়নি কেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন আদালত।
দেশে একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে শুনানিতে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, আমাদের নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। এজন্য ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক, প্রতিষ্ঠানের গভার্নিং বডি ও রাজনীতিবিদদের সচেতন হতে হবে।
রুলের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (বাশার) বলেন, আদালত এই ঘটনায় গৃহবধূকে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার ওই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ মীমাংসার নামে তথাকথিত সালিশি বৈঠক ও জরিমানা আদায় কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মেও রুল জারি করেন আদালত।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এলজিআরডি সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক, সুবর্ণচরের ওসি, ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে চর মাকসুমুল গ্রামের এক গৃহবধূকে ‘ধর্ষণের’ পর বিষপানে তার আত্মহত্যার ঘটনায় সোমবার (৪ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুনতাসীর মাহমুদ রহমান এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূ বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবারের দাবি, স্বামীর সঙ্গে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ধর্ষণের শিকার হন গৃহবধূ পলি আক্তার। পরে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন তিনি।
শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে ইউনিয়নের চর মাকসুমুল গ্রামে ধর্ষণের ঘটনার পর শনিবার (২ মার্চ) সকালে ওই গৃহবধূ বিষপান করেন। পরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত গৃহবধূর পারিবারিক সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে একই এলাকার আলাউদ্দিন ঘরে ঢুকে পলি আক্তারকে ধর্ষণ করে। এরমধ্যে তার স্বামী সোহাগ বাড়িতে এসে স্ত্রীর চিৎকার শুনতে পান এবং বিষয়টি বুঝতে পেরে আশপাশের লোকজন ডেকে আলাউদ্দিনকে আটক করেন।
এক পর্যায়ে পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের নুরু মেম্বারসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ওই রাতেই ধর্ষককে মারধর এবং ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেন। পরদিন সকালে ওই গৃহবধূ বিষপান করলে তাকে পরিবারের লোকজন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।