প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে এত মামলা যে ফাইল রাখার মত পর্যন্ত জায়গা নেই। এককথায় ক্রিটিকাল অবস্থা, এভাবে চলতে পারে না।
আজ রোববার (২৮ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি র নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে একটি মামলার শুনানিকালে তিনি একথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, গতকাল সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে জিআইজেডের উপস্থাপন করা সুপ্রিম কোর্টের মামলার নীরিক্ষা প্রতিবেদন দেখে আমি প্রায় বিব্রত। এত মামলা! এভাবে চলতে পারে না।
‘তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মামলাজট নিরসন বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সকল বিচারপতিদের নিয়ে বসব। সবাইকে বলব যে, এ অবস্থায় কী করবেন আপনারা দেখেন।’
এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে প্রায় ৫ লক্ষ ২৫ হাজার মামলা বিচারাধীন। যা ১৯৮২ সালে ছিল মাত্র ২৫ হাজার। আর আগাম জামিনের আবেদনগুলো যদি নিষ্পত্তি না করা হত তা তাহলে বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে মামলার পরিমাণ ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেত।
এর আগে গতকাল সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটি ও জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন বাংলাদেশ (জিআইজেড) আয়োজিত দেশের মামলার বিচার সংক্রান্ত এক নীরিক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, বিচারাধীন মামলার বন্দীদের নিয়ে দেশের কারাগারগুলো প্রচণ্ডরকম গাদাগাদি পূর্ণ।
প্রধান বিচারপতি বিচার ব্যবস্থার বিদ্যমান অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি মামলাজট ও এর সমস্যা থেকে উত্তরণের বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। আর বিচারাধীন মামলার তুলনায় বিচারকের অপর্যাপ্ততা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রতিদিন মামলাজট বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে প্রতি দশ লাখ লোককে মাত্র ১০ জন বিচারক বিচারিক সেবা দিচ্ছেন।’
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির একটি নিরীক্ষা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মামলা পারস্পরিক বোঝাপড়া বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। এবং সেখানে বড়জোর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মামলা নিষ্পত্তি হয় আদালতে। আর আমাদের দেশে চিত্র ঠিক এর বিপরীত।
‘এদেশে কেবল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয়ে থাকে বোঝাপড়া বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে। আর ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয় আদালতে।’