বরগুনায় রিফাত শরীফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার অগ্রগতি জানানোর সময় হাইকোর্ট বলেছেন, ‘আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পছন্দ করি না।’
আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার একেএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাসার রিফাত হত্যা মামলার সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরেন।
তিনি আদালতকে বলেন, ‘এই মামলার কোনো আসামি দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পারেনি। এরই মধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত ৫ জন আসামি এবং সন্দেহভাজন ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাটির প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। শত শত পুলিশ র্যাব মাঠে কাজ করছেন আসামিদের ধরতে।’
এসব তথ্য জানার পর আদালত বলেন, ‘আমরা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড) পছন্দ করি না। আর একদিনেই এই নয়ন বন্ড তৈরি হয়নি। তাকে লালন করা হয়েছে। ক্রিমিনাল বানানো হয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বরগুনায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন।
সেদিন আদালত বলেন: ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি আগে এরকম ছিল না। অনেকে দাঁড়িয়ে দেখেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলেন না। সমাজ কোথায় যাচ্ছে? আমারা সবাই মর্মাহত।’
এরপর আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, বরগুনা যেহেতু সুন্দরবন এবং বর্ডারের কাছে সেহেতু আইজিপিকে ইনফর্ম করুন যাতে আসামিরা বর্ডার ক্রস করতে না পারে। প্রয়োজনে সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করুক।’
সেসময় আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এ বিষয়ে আদেশ চাইলে আদালত বলেন, যেহেতু মামলা হয়েছে সেহেতু আমরা আদেশ দিচ্ছি না। কিন্তু কোনো অনিয়ম বা অবহেলা হচ্ছে কিনা আমরা তা নজরে রাখব এবং আগামী বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আবার অগ্রগতি জানব।
তারই ধারাবাহিকতায় আজ আদালতে এ মামলার অগ্রগতি জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে দশটার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের পাশে রিফাতকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে কয়েকজন যুবক। সেসময় নানাভাবে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেও বাঁচতে পারেনি রিফাত।
ওই ঘটনার একটি ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক রিফাতকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একের পর আঘাত করছে। আর তাদের হাত থেকে স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা করছেন রিফাতের স্ত্রী মিন্নি। এবং তিনি চিৎকার করে সাহায্য চাচ্ছেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে অনেকে উপস্থিত থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় রিফাতকে প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রিফাতকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এরপর গত ২৭ জুন সকালে নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তাতে বরগুনা শহরে চিহ্নিত সন্ত্রাসী সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড এবং তার সহযোগী রিফাত ফরাজী ও তার ছোট ভাই রিশান ফরাজীসহ ১২ জনকে আসামি এবং আরও চার-পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
এরই মধ্যে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড গত মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।